গোপনে ঢাকামুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা, রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় পুলিশ সতর্ক

সরকার পরিবর্তনের পর অপরাধের উর্ধ্বগতি

সরকার পরিবর্তনের পর সারাদেশে সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও হামলার মতো অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম (Chattogram) জেলায় এসব অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় প্রতিটি থানাকে বিশেষ নজরদারির আওতায় এনেছে পুলিশ।

গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, আওয়ামী লীগ (Awami League) এর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা রাজধানীতে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

চট্টগ্রামে সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে চট্টগ্রামে সহিংসতা, জমি দখল, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশের মনোবল দুর্বল হওয়ার সুযোগে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সতর্কতামূলক নির্দেশনা ও নজরদারি

এই পরিস্থিতিতে গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) (Chattogram District Special Branch (DSB)) জেলার সব থানায় একটি সতর্কতামূলক নির্দেশনা পাঠায়। সেখানে পুলিশ সদস্যদের জন্য আটটি নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

  • সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরে রাখা
  • যাদের নামে মামলা রয়েছে, তাদের মোবাইল ট্র্যাক করে অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তার
  • গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন
  • নৌঘাট, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে বাড়তি নজরদারি

এছাড়াও ঢাকামুখী যাত্রা প্রতিহত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো, উসকানিদাতাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং ভাড়ায় চালিত যানবাহন ও স্ট্যান্ডগুলোতে পর্যবেক্ষণ জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় জমায়েতের আহ্বান এবং জনমনে উদ্বেগ

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় সমবেত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ প্রশাসনের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের (Chattogram District Police) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মোহাম্মদ রাসেল (Mohammad Rasel) বলেন, “সরকার পরিবর্তনের সময় কিছুটা ধাক্কা খেলেও পুলিশের মনোবল এখন পুনরুদ্ধার হয়েছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।”

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (Chattogram Metropolitan Police) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম (Mahmuda Begum) বলেন, “নগরীতে পুট ও নাইট পেট্রোল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন চেকপোস্ট স্থাপন এবং মিনি টিম গঠন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।”

চট্টগ্রাম জেলা ডিএসবির (Chattogram District DSB) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জুনায়েত কাউছার (Mohammad Junayet Kawsar) বলেন, “নির্দিষ্ট কোনো চিঠির বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমরা নিয়মমাফিক যেকোনো হুমকি বা গুজব পেলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিই। পুলিশ সবসময় সতর্ক ও সচেতন রয়েছে।”

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ

রাজনৈতিক অস্থিরতার এই পটভূমিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবিলায় নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।