সাভারে আলোচিত ‘ক্রিম আপা’ গ্রেপ্তার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ এবং অনলাইন আয়ের লক্ষ্যে নিজের শিশু সন্তানদের ব্যবহার করে নিষ্ঠুর আচরণ করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাভারের আলোচিত ‘ক্রিম আপা (Cream Apa)’ নামে পরিচিত শারমিন শিলা (Sharmin Shila)।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভার উপজেলা পরিষদ (Savar Upazila Parishad) চত্বর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানা (Ashulia Police Station) পুলিশ।
মামলা দায়ের ও অভিযোগের বিবরণ
এর আগে বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ‘ক্রিম আপা’ শারমিন শিলার বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা করেন সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (Savar Upazila Women Affairs Officer) কাজী ইসরাত জামান (Kazi Israt Jaman)।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আশুলিয়া (Ashulia) এলাকার বাসিন্দা শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। তিনি নিজের নাম ‘ক্রিম আপা’ ব্যবহার করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কসমেটিকস বিক্রি করেন এবং ভিডিও তৈরি করেন, যেখানে তাঁর সন্তানদের ব্যবহার করা হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং নির্যাতনের বিবরণ
গত ৩০ মার্চ বিকেল চারটায় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শারমিন শিলা, যা দ্রুতই ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি তাঁর দুই বছরের কন্যাশিশুকে জোর করে কেকজাতীয় কিছু খাওয়াচ্ছেন। তার মুখে চাপ দিয়ে, শিশুর অসম্মতিতেই তাকে খাওয়ানো হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে সন্তানদের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে শারীরিক আঘাত, উৎপীড়ন ও অবহেলা করেছেন। এসব আচরণের ফলে শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সামাজিক আন্দোলন ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
‘একাই একশো’ (Ekai Eksho) নামে শিশু সুরক্ষার পক্ষে একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী সাদাত রহমান (Sadat Rahman) ও অন্যান্য সদস্যরা সম্প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (Dhaka District Commissioner’s Office) এ একটি স্মারকলিপি জমা দেন। প্রশাসন তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়।
স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় (Ministry of Women and Children Affairs) এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর (Department of Social Services) এর মহাপরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়।
আত্মপক্ষ সমর্থন ও গ্রেপ্তার
বাইপাইল (Baipayl) এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পারলার রয়েছে। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি দাবি করেন, সন্তানদের নির্যাতন করেননি, বরং সন্তানদের ভালোবাসেন। ভিডিওতে ছেলে তার হয়ে কথা বলেছে বলেও দাবি করেন। তবে তিনি বিভিন্ন সময় ভিডিও আপলোড করে তা আবার ডিলিট করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শেষ পর্যন্ত, টিকটকে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া ও শিশুদের সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে সাভার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আনা হয়। পরে পুলিশ তাঁকে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করে।