ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের আহ্বান মাহমুদুর রহমানের

রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ক সেমিনারে প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন

ফ্যাসিবাদের সম্ভাব্য উত্থান রোধে বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন মাহমুদুর রহমান (Mahmudur Rahman)। শনিবার অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়া (RAOWA) আয়োজিত “রাষ্ট্র সংস্কার: রাজনীতিমুক্ত সামরিক বাহিনী” শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

সংসদীয় ব্যবস্থার সমালোচনা এবং সামরিক বাহিনীর রাজনীতিকরণ নিয়ে উদ্বেগ

মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি জনগণ এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তার মতে, বাংলাদেশের নীতিহীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তারা সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছেন। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman)-এর আমলে।

শেখ হাসিনার শাসনের কঠোর সমালোচনা

তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সামরিক বাহিনী, পুলিশ (Police), র‌্যাব (RAB) এবং ডিজিএফআই (DGFI)-কে ব্যবহার করে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেছেন এবং বিরোধী মত দমন করেছেন। তিনি এই প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।

প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি

মাহমুদুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদলে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। এ সময় তিনি নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

ভারতীয় প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে উদ্বেগ

তিনি ভারতীয় আধিপত্য ও সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সুবীর ভৌমিক (Subir Bhaumik) এবং তানিয়া আমির (Tania Amir)-এর সাম্প্রতিক বক্তব্য ও লেখাকে রাষ্ট্রবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর আখ্যা দেন তিনি।

অতীত ইতিহাস ও সামরিক আইন

জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman) নয়, বরং খালেদ মোশাররফ (Khaled Mosharraf) প্রথম সামরিক আইন জারি করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ (Awami League) ও ভারতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন।

এলডিপির কর্ণেল অলির বক্তব্য

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অলি আহমেদ (Oli Ahmed) বলেন, ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও এর সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছে। তিনি সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারত সফর বন্ধের আহ্বান জানান এবং ভারতীয় ব্ল্যাকক্যাটদের বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন।

ব্রি. জে. (অব.) আবদুল্লাহ আল ইউসুফের সুপারিশ

সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে আবদুল্লাহ আল ইউসুফ (Abdullah Al Yusuf) বলেন, সামরিক বাহিনীর প্রধানকে রাষ্ট্রপতির অধীনে ন্যস্ত করা উচিত, যিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।

সামরিক বাহিনীর পেশাদারীকরণে সুপারিশ

মাহমুদুর রহমান সামরিক বাহিনীর পেশাদারীকরণে জাতীয় নীতিমালা, স্বচ্ছ বাজেট, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ এবং বাণিজ্য সম্পর্ক বিযুক্তিকরণসহ একাধিক সুপারিশ পেশ করেন।