গোপন সাত দফা চুক্তি: ইতিহাসের আলোচিত অধ্যায়
ভারত (India) ও তাজউদ্দীন আহমদ (Tajuddin Ahmad)-এর মধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাক্ষরিত গোপন সাত দফা চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলে আসছে। সেই সময়ে মুজিবনগর সরকার (Mujibnagar Government) ভারতে অবস্থানকালে এসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা পরবর্তীতে দেশের জনগণের মধ্যে চরম অসন্তোষের জন্ম দেয়।
চুক্তির মূল বিষয়বস্তু ও সমালোচনা
মাওলানা ভাসানী (Bhashani)-র হক-কথা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চুক্তির বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক নানা খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। চুক্তির সাতটি প্রধান পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলো:
- **রক্ষীবাহিনী গঠন ভারত তার পছন্দসই লোক দিয়ে একটি আধাসামরিক বাহিনী গঠন করে, যা মূল সেনাবাহিনী থেকে বড় ও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হবে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।
- অস্ত্র ক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশ শুধুমাত্র ভারতের কাছ থেকেই অস্ত্র কিনতে পারবে। সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণ করবে ভারত।
- বহির্বাণিজ্যে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ: কোন পণ্য রপ্তানি করা যাবে এবং তার মূল্য নির্ধারণ করবে ভারত। এমনকি আমদানি তালিকাও ভারত অনুমোদন করবে।
- উন্নয়ন পরিকল্পনায় অনুমোদন: বাংলাদেশের বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ভারতকে দিয়ে অনুমোদন করাতে হবে।
- পররাষ্ট্রনীতিতে অনুসরণ: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে ভারতের নীতির অনুবর্তী।
- চুক্তি বাতিলের একতরফা ক্ষমতা নেই: বাংলাদেশ একতরফাভাবে এসব চুক্তি বাতিল করতে পারবে না, তবে ভারত পারবে।
- ভারতীয় সেনার প্রবেশাধিকার: ভারতীয় বাহিনী যেকোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে এবং প্রয়োজনবোধে ‘শত্রু’ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ (Dr. Mahbub Ullah) যুগান্তরকে বলেন, “একজন নাগরিক হিসেবে আমি জানতে চাই, ১৯৭১ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কী কী চুক্তি হয়েছে। এতে আমাদের কতটা লাভ বা ক্ষতি হয়েছে তা জনগণের জানা উচিত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka)-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শাহাদুজ্জামান (Dr. Shahadujjaman) বলেন, “যদি এখনো এমন কোনো চুক্তি অপ্রকাশিত থেকে থাকে, তবে তা সরকার নথিপত্র খুঁজে প্রকাশ করতে পারে। জনসাধারণের এই তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।”
জনগণের দাবি: চুক্তির স্বচ্ছতা ও প্রকাশ
সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে এখনো দাবি উঠছে যে এসব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। কারণ এতে বোঝা যাবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন পথে পরিচালিত হয়েছে।