সম্প্রীতির প্রতীক আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) বলেছেন, ঢাকার মেরুল বাড্ডা (Merul Badda) এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার (International Buddhist Monastery) বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বৌদ্ধবিহার শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্যই নয়, বরং দেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
রোববার সকালে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের ‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়েই এই মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, “বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এমন একটি শান্তিপূর্ণ ও চমৎকার অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন (Bangladesh Buddhist Federation) এবং আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের কর্মকর্তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।” একই সঙ্গে তিনি সবাইকে বাংলা নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছাও জানান।
ইতিহাস, শিক্ষা ও জনকল্যাণে বৌদ্ধবিহারের ভূমিকা
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলের বৌদ্ধবিহারগুলো শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছিল না, বরং তা শিক্ষা ও জনকল্যাণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল।” তিনি উল্লেখ করেন, “দূরদূরান্ত থেকে ভিক্ষু ও ছাত্ররা এখানে আসতেন এবং গৌতম বুদ্ধ (Gautama Buddha)-র শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করতেন।”
বৌদ্ধ ধর্ম সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় নিবেদিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বুদ্ধ বলেছেন, ‘শান্তি ও সুখ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না, এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণীকেও নয়।’”
অতীশ দীপঙ্করের আন্তর্জাতিক অবদান
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করেন বাংলাদেশের বৌদ্ধ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর (Atish Dipankar)-এর কথা, যিনি বুদ্ধের বাণী বহন করে তিব্বতে গিয়েছিলেন এবং এখনও চীনে তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় স্মরণ করা হয়।
তিনি বলেন, “বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন, স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পণ্ডিতগণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।”
বৈচিত্র্যের মাঝেই একতা
বক্তব্যের এক পর্যায়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি সবসময় বলে আসছি, নানা মত, ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যেও আমরা একই পরিবারের সদস্য। এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করছে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিন্নতা থাকলেও, আমাদের বন্ধন অটুট।”
তিনি যোগ করেন, “আগামীকাল পয়লা বৈশাখ আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। সবাই নিজেদের রীতি অনুযায়ী এ উৎসব উদযাপন করবেন এবং সার্বজনীনভাবে অংশগ্রহণ করবেন।”