ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) দেশের অন্যতম বড় শক্তি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত একটি নাম বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখায়াত হোসেন (Brigadier General (Retd.) Dr. M Sakhawat Hossain)।
লন্ডন (London) থেকে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যেখানেই মাননীয় উপদেষ্টা যাচ্ছেন, সেখান থেকেই সফলতা বয়ে আনছেন। দেশবাসীর উচিত এই সম্পদকে কাজে লাগানো।”
গণঅভ্যুত্থানের অর্জনের অপব্যবহার না করার আহ্বান
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অর্জনের অপব্যবহার না করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “কেউ যেন এমন কিছু না করেন যাতে দেশের অর্জিত স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ব্যাহত হয়।”
একটি গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য ভাঙচুর ও লুটপাটে লিপ্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এমন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
তিনি বলেন, “যে কেউ দাবি আদায়ে সমাবেশ বা বিক্ষোভ করতে পারেন, তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।”
শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর
দেশের অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান সরকার কিংবা আগামী যেই সরকারই আসুক, তাদের এই খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আমরা, তবে অন্যায্য দাবি আদায়ের নামে ভাঙচুর ও সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না।”
উপদেষ্টা আরও জানান, নৌ শ্রমিকসহ সকল শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে শ্রমিকদের জন্য আরও কিছু সুবিধা পরিকল্পনায় রয়েছে।
শিল্প গড়ে উঠেছে শ্রমিকদের শ্রমে
শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের শিল্প গড়ে উঠেছে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে।” তবে তাদেরকে দায়িত্বশীলভাবে ন্যায্য দাবি তুলতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যেসকল মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
এছাড়া শ্রমিকদের তহবিলের অর্থ শুধুমাত্র তাদের কল্যাণেই ব্যয় হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
নৌ নিরাপত্তা ও ব্লু ইকোনোমি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশের দশ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কিছু বিশেষ এলাকায় বিশেষ করে কার্গো চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিঘ্ন দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “নৌ পুলিশকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের (Ministry of Shipping) অধীনে এনে তাদের আকার ও জলযান বাড়াতে হবে।” বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে বর্তমানে কোস্ট গার্ড (Coast Guard) ও নেভি (Navy) কাজ করছে বলে জানান তিনি।
ব্লু ইকোনোমির প্রসারে বাংলাদেশের আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “এআই-এর মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” তবে এর জন্য সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগও দরকার।
সমুদ্র নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা
উপদেষ্টা জানান, “বাংলাদেশের সমুদ্রপথ যদি কোনোভাবে ব্যাহত হয়, তাহলে দেশ একা হয়ে পড়বে।” এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালু রাখতে হবে।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “শুধু সমুদ্রসীমা নয়, সকল ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।”
নৌপথে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা
অভ্যন্তরীণ নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ইতিমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।