স্মৃতির শহরে বেদনার ছায়া—আফজাল হোসেনের বৈশাখী ভাবনা

অভিনেতা, নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শৈশবের গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি, পরিবার, সংস্কৃতি ও সময়ের পরিবর্তনের আক্ষেপ উঠে এসেছে তার লেখায়।

গ্রাম থেকে শহর—ভালো-মন্দের সমান্তরাল

আফজাল হোসেন লিখেছেন, “আমি, আমরা গ্রামে জন্মানো, গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষ। ছোট্ট গ্রামটা ভর্তি ছিল বড় বড় মানুষে।” শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা চোর-পুলিশ খেলেছি, কেউ চোর হতে চাইত না।” সেই সরল জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন রেডিও নাটক, গানের মাইকে বাজা, মসজিদ ও কালীমন্দিরের সহাবস্থান, এবং বটগাছে পাখির কিচিরমিচির।

পরিবার ও মূল্যবোধের স্মৃতিচারণ

তিনি স্মরণ করেন তার বাবা-মাকে, যাদের তিনি আগে ডাকতেন “আব্বাজান” ও “আম্মাজান”। জানালেন, স্কুলে নামাজ শিখে এলেই তাঁরা খুশি হতেন, আবার ছবি আঁকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাও করতেন।

শিল্পী জীবনের সূচনা ও মুক্তিযুদ্ধ

আফজাল হোসেন জানান, আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সময়টাই ছিল আন্দোলনের উত্তাল সময়। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি পাস করে বের হন, আর্ট ও অভিনয়ে জড়িত হন, যা রোজগারের জন্য আদর্শ নয়—তবুও বাবা-মা আনন্দে থাকতেন, কারণ “ছেলে ভালো, গৌরব করার মতো কাজে আছে।”

স্মৃতির গ্রাম নেই, শহরেরও ভাষা বদলেছে

আফজাল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, এখনকার প্রজন্মকে সেই শব্দ, বর্ণ, গন্ধের গ্রাম দেখাতে পারেন না। বলেন, “সহস্র শব্দ বর্ণ আর গন্ধের মধ‍্যে আমরা বড় হয়েছি- আমাদের সন্তানদের সেই শব্দ বর্ণ গন্ধের সামান্যও শোনাতে, দেখাতে, অনুভব করাতে পারি না।”

বদলে যাওয়া সময়, অজানা লোকসান

সবশেষে তিনি লেখেন, “বহুকালের পুরাতন বহু ভালো বদলে নতুন ভালো তৈরি করতে চায় মানুষ। কতটুকু লাভ বা কি পরিমাণ লোকসান হয়েছে তাতে, তার খোঁজ কেউ কখনো করেছে বলে মনে হয় না। তবু স্বপ্ন দেখি, আশা আছে।” বাংলা নববর্ষে তিনি সবার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।