দেনমোহর পরিশোধে মুদ্রাস্ফীতি গণ্য হবে না: ইসলামী দৃষ্টিকোণ

বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত দেনমোহর ইসলামে স্বামীর ওপর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার হিসেবে গণ্য। তবে প্রশ্ন উঠেছে—দেনমোহর পরিশোধে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কি বিবেচনায় আসবে? এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইসলামিক চিন্তাবিদ মুফতি মীযানুর রহমান এখলাসপুরী

মোহর: ইসলামী বিধান ও ঋণের বৈধতা

বিবাহের সময় স্বামী কর্তৃক ধার্যকৃত মোহর যদি পরিশোধ না করা হয়, তাহলে তা স্ত্রীর ন্যায্য পাওনা ও স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এমন ঋণ পরিশোধ ছাড়া বা স্ত্রী সন্তুষ্টচিত্তে তা মাফ না করলে তা ক্ষমাযোগ্য নয়। ইসলামী শরিয়তে মোহর আদায় না করা কবিরা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত।

মুফতির ব্যাখ্যায়, “মোহর পরিশোধ না করেই যদি স্ত্রী সংসার করেন, তবু সেটা স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবেই থেকে যায়। এমনকি কোনোভাবে চাপ দিয়ে বা মুখে মৌখিকভাবে মাফ করালেও তা প্রকৃত মাফ হিসেবে গণ্য হবে না।”

মুদ্রাস্ফীতি কি গৃহীত হবে?

উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, ২০০০ সালে বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ টাকা। পরিশোধ হচ্ছে ২০২৫ সালে, যখন মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ। তাহলে কি মোহরের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হবে?

ইসলামী দৃষ্টিকোণে এর উত্তর—না। মুফতি এখলাসপুরী ব্যাখ্যা করেন, ইসলামি শরিয়তে ঋণ পরিশোধে মুদ্রাস্ফীতি কিংবা মুদ্রাসংকোচ কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। সবসময় পরিশোধ করতে হবে মূল ধার্যকৃত পরিমাণ অর্থ, মূল্য নয়।

ফতোয়া ও ফিকহের দৃষ্টিভঙ্গি

দারুল উলুম দেওবন্দ (Darul Uloom Deoband)–এর একটি ফতোয়ায় (নং ১৬৩৩১৬) বলা হয়, মোহর আদায় করতে হবে বিবাহের সময়কার নির্ধারিত অংকেই। ফিকহের মূলনীতিতে বলা হয়েছে—ঋণ তার সদৃশ মাধ্যমেই পরিশোধ করতে হয়

অতএব, মোহর নির্ধারিত হয়েছে যদি ১০ হাজার বা ২ লাখ টাকা, তবে ২০ বা ৫০ বছর পরেও ওই পরিমাণ অর্থই পরিশোধ করতে হবে। স্বর্ণের দাম বা টাকার মূল্যের পরিবর্তন বিবেচ্য নয়

উপসংহার

মোহর কোনো দান নয়, বরং এটি ইসলামে স্ত্রীর অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এটি ঋণের মতোই পরিশোধযোগ্য এবং শরিয়ত অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতির ভিত্তিতে অর্থমূল্য বাড়িয়ে আদায় করা ইসলামী দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কাজেই যে অঙ্ক নির্ধারিত হয়েছে, পরবর্তীতে সেটিই মোহর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে—মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা না করেই।