নারায়ণগঞ্জ জেলার আলোচিত পোশাক খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপ বিগত এক যুগে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপটির উত্থানে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্য—শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু। এসব এমপির পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ, জমি দখল, অর্থপাচার, এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অভিযোগেও ফকির গ্রুপের নাম উঠে এসেছে।
গত বছরের ২২ আগস্ট আড়াইহাজার এলাকায় শফিকুল ইসলাম শফিক ও মো. বাবুল নামের দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। একই মামলায় ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের এমডি ফকির আক্তারুজ্জামান, তার ভাতিজা ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামানকে অর্থদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ফকির গ্রুপ অর্থের প্রস্তাব দেয়, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এছাড়া ফকির গ্রুপের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায় সংগীতশিল্পী ইভা রহমান গুলশানের ১৮ কোটি টাকার দুটি ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে ফকির আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুসহ মোট ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ইভার অভিযোগ, অস্ত্রের মুখে তাকে ও তার সন্তানকে জিম্মি করে ওই ফ্ল্যাট দু’টি দখল করে নেয় ফকির গ্রুপ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক যুগে ফতুল্লা, রূপগঞ্জ, কায়েমপুর, ডহওরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকহারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে ফকির গ্রুপ। এ সময় গড়ে তোলা হয় ফকির নিটওয়্যারস, ফকির ফ্যাশন, ফকির স্পিনিংসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নামমাত্র মূল্যে শত শত বিঘা জমি দখল করে নেয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, জমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ভয়ভীতি, এমনকি মামলা দিয়ে হয়রানির পথও নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ফকির গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অংশীদার। বরপায় একটি স্পিনিং মিল বাবুর মাধ্যমে ফকির আক্তারুজ্জামান কিনে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফ্ল্যাট দখল মামলায় আসামিদের খোঁজ চলছে এবং অধিকাংশ আসামি পলাতক।
এদিকে, সাংবাদিকদের একাধিক প্রচেষ্টার পরেও ফকির গ্রুপের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফকির অ্যাপারেলসের এজিএম (প্রশাসন) জাকির মাহমুদ জানিয়েছেন, গ্রুপটির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই।
বর্তমানে ফকির গ্রুপের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থপাচার, জমি দখল, হত্যাকাণ্ডে অর্থদানের মতো গুরুতর অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।