রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পার্কিং টোলের নামে নিয়মিত চাঁদাবাজি চলছে, যার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে সাঈদ খোকন (Saied Khokon) এবং শেখ ফজলে নূর তাপস (Sheikh Fazle Noor Taposh)কে। দুই সাবেক মেয়রের আমলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (DSCC) অনুমোদিত ইজারার নামে হাজার কোটি টাকার অবৈধ চাঁদাবাজির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
পার্কিং ইজারায় রাজনৈতিক সুবিধাবাদ
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাঈদ খোকন তার রাজনৈতিক কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দিতে পার্কিং ইজারার অনুমোদন চালু করেন। এরপর শেখ তাপস ক্ষমতায় এসে সেই প্রক্রিয়ার ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়ে দেন। ফলস্বরূপ, রাজধানীর অন্তত ৫০টি স্পটে গাড়ি পার্কিংয়ের নামে টাকা তোলা হচ্ছে।
বৈধতার আড়ালে চাঁদাবাজি
মতিঝিল, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া এলাকায় এই চাঁদাবাজির ঘটনা বেশি ঘটে। গাড়ি থামালেই একদল লোক ৫০ থেকে ২০০ টাকা দাবি করে। আর যারা বেশি সময় পার্কিং করে তাদের কাছ থেকে ঘণ্টাপ্রতি চাঁদা আদায় হয়।
আইনের অপব্যবহার ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা
চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং ইজারা থাকার কথা থাকলেও তা অমান্য করে আশপাশের এলাকার প্রতিটি ফাঁকা জায়গা ও প্রধান সড়ক দখল করে টোল আদায় করা হয়। পুলিশ জানায়, সিটি করপোরেশনের অনুমোদন থাকায় তারা এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না।
সামাজিক মাধ্যমে চাঁদাবাজির ভিডিও ভাইরাল
জিগাতলা এলাকায় চাঁদাবাজির একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশ এক যুবককে আটক করে। তবে জানা যায়, ঘটনাস্থলটি ইজারাভুক্ত এলাকাই ছিল।
নামমাত্র ইজারার বিপরীতে বিশাল বাণিজ্য
হাতেগোনা কিছু টাকার বিনিময়ে দেওয়া ইজারার বিপরীতে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার চাঁদা আদায় হয়। উদাহরণস্বরূপ, সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের ইজারা মূল্য মাত্র ৫.৭৯ কোটি টাকা হলেও, পুরো চিটাগাং রোড থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত চাঁদাবাজি চলে।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির বক্তব্য
ডিএসসিসি-র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী জানান, অনুমোদিত পার্কিং এলাকাগুলোতেই ইজারা দেওয়া হয় এবং সেখানেই নিয়মানুযায়ী কার্যক্রম চলা উচিত। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-এর ফারজানা খানম বলেন, নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতেই পার্কিং ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে।
সমাধানহীন নগর সমস্যা
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই পার্কিং টোলের নামে চাঁদাবাজি ঢাকার যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাপস ও খোকনের অবৈধ অনুমোদনের পথ ধরেই আজ এই সিস্টেমিক চাঁদাবাজির সংস্কৃতি রূপ নিয়েছে।