নির্বাচন ইস্যুতে একসুরে বিএনপি ও জামায়াত, লন্ডনের বৈঠকে প্রভাবের আভাস

‘রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই’—এই প্রবাদ যেন আবারও সত্য প্রমাণিত হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিজামায়াতে ইসলামী একসুরে কথা বলছে। বিশেষ করে লন্ডনে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর থেকে দুই দলের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন নিয়ে কাছাকাছি অবস্থান

বিএনপি দাবি করছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় তারা—যা ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থান বিএনপির সঙ্গে প্রায় মিলে গেছে।

লন্ডনের বৈঠকের প্রভাব

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর সঙ্গে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. তাহেরের লন্ডনের বৈঠকের পর এই সুর পরিবর্তন এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈঠকে নির্বাচনের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সরকারের অবস্থান ও বিএনপির অসন্তোষ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার বড় হলে নির্বাচন হবে জুনে, আর ছোট সংস্কার হলে ডিসেম্বরে। কিন্তু বিএনপি ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষার বিপক্ষে। এ নিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দলটি।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ডিসেম্বর নির্বাচন সামনে রেখে ইসি কাজ শুরু করেছে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় হবে।

বিশ্লেষকদের মত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থাকলে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। জামায়াতের সুর বদলের পেছনে লন্ডনের বৈঠক প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে হচ্ছে।”

জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের বক্তব্য

  • বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু: “লন্ডনের বৈঠকের প্রভাব থাকতে পারে, তবে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান জনগণ ইতিবাচকভাবে নেবে।”
  • বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: “জামায়াতও এখন বলছে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দরকার, আমরাও বলছি ডিসেম্বরে।”
  • জামায়াত নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ: “সংস্কারের অগ্রগতি হলে নির্বাচনের পথ তৈরি হবে।”

উপসংহার

নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের প্রধান দুই বিরোধী দলের এ ধরনের সুরমিল রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঐক্য কার্যকর হলে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।