চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করেছেন, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
শুল্ক আরোপের ক্রমাগত ধাপ
শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, পরে তা বাড়িয়ে এক লাফে ১০৪ শতাংশে পৌঁছে দেয়। এরপর চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তারপর একাধিক ধাপে নতুন শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন, যা সর্বশেষ দাঁড়ায় ২৪৫ শতাংশে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগ
বিশ্বব্যাপী এই বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি যদি সঠিকভাবে সামলানো না যায়, তবে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে মন্দা বা তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধ খাতে নতুন পদক্ষেপ
এক ঘোষণায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ করবেন। এছাড়া ফেডারেল রেজিস্টারে দেওয়া নথি অনুসারে, চিপস ও ওষুধ আমদানির বিষয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শুল্ক আরোপের যুক্তি হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর খাতের আমদানি নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা অনুসারে এই শুল্ক আরোপকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে ধস
জাতিসংঘের আঙ্কটাড জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২.৮ শতাংশ থাকলেও ২০২৫ সালে তা কমে ২.৩ শতাংশে নামতে পারে। এই পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা।
বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) পূর্বাভাস দিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে চলতি বছরে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য কমে যেতে পারে ০.২ শতাংশ। যেখানে পূর্বাভাস ছিল ২.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।