মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়: জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান

নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মৌলিক সংস্কার’ ছাড়া ভোটগ্রহণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party)। দলটির দাবি, একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত হলো ক্ষমতার কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন।

মৌলিক সংস্কারের ব্যাখ্যা

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, “ন্যূনতম সংস্কার বলতে কিছু নেই। সংস্কার মানেই মৌলিক গুণগত পরিবর্তন।”

সারোয়ার তুষার বলেন, “ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো সংস্কারই মূলত মৌলিক নয়।”

এনসিপির দৃষ্টিতে যে প্রস্তাবনাগুলো মৌলিক সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত তা হলো—
– প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ
– প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন নিষিদ্ধ
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
– দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ
– সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার

গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি

দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন মনে করেন, গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া সংবিধান সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।”

বিএনপি ও অন্যান্য দলের অবস্থান

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এনসিপি মনে করে, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন নয়, বরং আগে ক্ষমতা কাঠামোয় সংস্কার আনতে হবে।
বিএনপি কেবল কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বিষয়ে একমত হলেও, সাংবিধানিক সংস্কারসহ বেশ কিছু বিষয়ে তারা পরে আলোচনা চায়। এনসিপি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “মৌলিক পরিবর্তন ব্যতীত নির্বাচন স্রেফ সময়ক্ষেপণ।”

জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মিল

জামায়াতে ইসলামীইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-ও এনসিপির মতোই “দৃশ্যমান ও গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার” শেষ হওয়ার আগে নির্বাচন না দেওয়ার পক্ষে। তবে এনসিপির নেতা সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলাদা কোনো অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য হয়নি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এনসিপি

ঢাকায় সফররত নিকোল চুলিক-এর সঙ্গে বৈঠকেও এনসিপির নেতারা জানান, “মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন দিলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তাতে এনসিপি অংশগ্রহণ করবে কি না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে।”

উপসংহার

জুলাই অভ্যুত্থান-এর নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গঠিত দলটি চায় এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন কাঠামোর অবসান। এনসিপির অবস্থান বলছে, সরকারকে অবশ্যই ‘গণতান্ত্রিক পথনকশা’ দিয়ে এই পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হতে হবে—নয়তো সামনে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হবে।