হাসিনা পালানোর খবরে বোরকা খুলে ফেলি: গণআন্দোলনের স্মৃতিতে বাঁধন

আজমেরী হক বাঁধন (Azmeri Haque Badhon) জুলাই ২০২৪-এ বাংলাদেশের গণআন্দোলনের সময়কার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন—এই খবরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিজের বোরকা ও হিজাব খুলে রাস্তায় নেমে পড়েন এবং জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে রিকশায় পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ান।

শিল্পী থেকে কর্মী হয়ে ওঠার এই উত্তরণকে বাঁধন ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ বলে মনে করেন। তাঁর ভাষায়, “উনি পালাইছে পালাইছে করতে করতে আড়াইটার সময় আমি বনানী পর্যন্ত গেছি। তখন বলছে, ‘পালাইছে, পালাইছে’। আমি তখন বোরখা, হিজাব পরে ছিলাম। রাস্তায় ওটা ফেলে দিছি। আমার কাছে বাংলাদেশের পতাকা ছিল, সেটা গায়ে জড়িয়ে রিকশা নিয়ে ঘুরেছি পুরো ঢাকা শহর।”

“আমি একজন মানুষ”—সাহসী সিদ্ধান্তে বাঁধন

বাঁধন জানান, রাষ্ট্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার অবস্থান শিল্পী, মা কিংবা চিকিৎসকের পরিচয়ের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল। “আমি একজন শিল্পী, ডাক্তার, মা—সবকিছুর আগে আমি একজন নাগরিক, একজন মানুষ। তাই সিদ্ধান্ত নিই মাঠে নামবো,” বলেন তিনি।

‘ছাত্রদের কাছেই শিখেছি ভয়হীনতা’

তিনি জানান, ২৬-২৭ জুলাই থেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং ১ আগস্ট থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “ছাত্রদের কাছ থেকেই আমি শিখেছি কীভাবে ভয়হীন হতে হয়, কীভাবে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “ভয় ছিল, কিন্তু এক ধরনের আনন্দও ছিল। যারা আন্দোলনে ছিল না, তারা ওই পজিটিভ ভাইবটা বুঝবে না।”

“শুধু প্রশাসনিক নয়, মানসিক সংস্কার জরুরি”

বর্তমান সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে বাঁধন বলেন, “শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, মানসিক সংস্কারও জরুরি। ব্যক্তি পর্যায়ে সৎ, ন্যায়বান ও দেশপ্রেমিক মানুষ গড়ে উঠলে তার প্রভাব সমাজের প্রতিটি খাতে পড়বে।”

আন্দোলনের মূল্য এবং প্রত্যাশা

আন্দোলনের দিনগুলোকে বাঁধন ‘ভয়ঙ্কর ও অস্থির’ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেন, “আমরা অনেক দূর এসেছি। সামনে আরও সুন্দর, আরও মসৃণ পথ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

এই বক্তব্যে স্পষ্ট, বাঁধনের মতো মানুষের অংশগ্রহণেই গণআন্দোলন পেয়েছে তার প্রাণশক্তি এবং দেশের সামনে একটি নতুন রাজনৈতিক সূর্যোদয়ের আশা জাগিয়েছে।