ভারতের সঙ্গে সংঘাতমুখী নীতিতে ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ, সাউথ ব্লকের কড়া বার্তা

নয়াদিল্লির সতর্কবার্তা: ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতি

সাউথ ব্লক (South Block) ভারতের পক্ষ থেকে ঢাকাকে কড়া বার্তা দিয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম সংঘাত তৈরি করে নিজেদের অর্থনীতিকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নয়াদিল্লির দাবি, এই পরিস্থিতির দায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের ওপর বর্তায়।

ছয়টি প্রধান অভিযোগ

সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, সাউথ ব্লক ঘরোয়া আলোচনায় বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার ছয়টি দিক চিহ্নিত করেছে:

  1. ভারতের সঙ্গে কৃত্রিম সংঘাত সৃষ্টি করে বন্দর বন্ধ রাখা এবং ট্রান্সশিপমেন্ট আটকে দেওয়া।
  2. দেউলিয়া পাকিস্তান (Pakistan) ও শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) থেকে বিকল্প অর্থনৈতিক সুবিধা খোঁজা।
  3. রাজনৈতিক লাভের জন্য জনগণের অর্থনৈতিক স্বস্তিকে উপেক্ষা করা।
  4. ধারাবাহিকভাবে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প কারখানার বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  5. লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি।
  6. বেড়ে যাওয়া বেকারত্ব।

পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ

সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রসচিব মহম্মদ জসীমউদ্দিন (Mohammad Jasimuddin) এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আম্মা বালোচ (Amna Baloch)। এটি ১৫ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এমন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল (Randhir Jaiswal) জানিয়েছেন, এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নয়াদিল্লি তা নজরে রাখছে।

বৈঠকে করাচি ও চট্টগ্রাম (Chattogram) এর মধ্যে সরাসরি নৌপরিবহন চালুর বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, পাশাপাশি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, এসব পদক্ষেপ ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্পর্ক আরও তিক্ত করতে পারে।

বানিজ্যবিরোধ: একে অপরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। এর পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশ (Bangladesh) ঘোষণা দিয়েছে, তারা ভারতের থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করবে। তবে সাউথ ব্লক জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং এর আগেই তিনটি স্থলবন্দর ও একটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে ইউনূস সরকার (Yunus Government)।

নয়াদিল্লির দাবি, এইসব পদক্ষেপ শুধু ভারতের নয়, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদেরও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

গার্মেন্ট খাতের বিপর্যয়

গত কয়েক মাসে সাভার (Savar), আশুলিয়া (Ashulia), ধামরাই (Dhamrai) এবং গাজীপুর (Gazipur) এলাকাতে ৬৮টি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী মে মাস থেকে আরও ছয়টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ (Keya Group)।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কড়াকড়ি, উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং আগের আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের ঘনিষ্ঠ মালিকদের আত্মগোপনে চলে যাওয়া—এই সবই সংকটের কারণ। ফলে, হাজার হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতন ও কারখানা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন, যা প্রায়ই সড়ক-মহাসড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে।

এদিকে ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিও কমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।