চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) বৈশ্বিক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চেয়েছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে পাশে পেতে চান। উদ্যোগ তিনটি হলো— গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ। যদিও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ইউনূস-জিনপিং বৈঠক ও কূটনৈতিক বার্তা
গত ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চীন সফরে যান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এই সফরকালে তার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকে চীন বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন শি জিনপিং ঘোষিত বৈশ্বিক তিনটি উদ্যোগে যুক্ত হয়।
তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এই উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করলেও, সরাসরি যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন (China) এখন একটি পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যুক্তরাষ্ট্র (United States) চায় না বাংলাদেশ খুব বেশি চীনের প্রভাববলয়ে চলে যাক। এতে করে বাংলাদেশের অবস্থান হয়ে উঠেছে কূটনৈতিকভাবে জটিল।
একদিকে চীন বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বড় বিনিয়োগকারী, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ‘ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি’ বজায় রাখতে চায়।
যৌথ বিবৃতির বার্তা
চীন সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশ মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যৎ সম্প্রদায় গঠনের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এবং গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের প্রশংসা করে।” একই সঙ্গে গ্লোবাল সিকিউরিটি ও সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বও বাংলাদেশ অনুধাবন করে বলে উল্লেখ করা হয়।
ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকদের মতে, শি জিনপিংয়ের এই তিন উদ্যোগ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ও কোয়াড এর পাল্টা কৌশল। কোয়াডে যুক্ত রয়েছে জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে চীন গড়ে তুলতে চায় নতুন আন্তর্জাতিক বলয়।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এ যুক্ত রয়েছে এবং মেরিটাইম সিল্ক রোড চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে। তাই চীনের অনুরোধ উপেক্ষা করাও বাংলাদেশের জন্য কৌশলগতভাবে কঠিন।
সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে কৌশলগত অবস্থান
বাংলাদেশ সরাসরি গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভগুলোতে যোগ না দিলেও, ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে কৌশলী অবস্থান বজায় রাখছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত অবস্থান না নেওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব একটি বড় কারণ।