জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পুনরুদ্ধার ইস্যুতে ফের আলোচনায় এটিএম আজহার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও অংশগ্রহণের প্রশ্নে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ইস্যু এখন বিচারাধীন রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। একটি হলো দলটির নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার আবেদন, অপরটি হলো দলের শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম-এর মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিল। এই দুই ইস্যু নিয়ে ফের আলোচনায় এসেছে দলটি।

আট মাসেও নিষ্পত্তি হয়নি গুরুত্বপূর্ণ দুটি মামলা

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর দেশের রাজনীতিতে একাধিক দল ফের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামলেও জামায়াতে ইসলামী এখনো দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পায়নি। ইতোমধ্যে আসন্ন নির্বাচনের জন্য দলটি প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু নিবন্ধন ও প্রতীক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে সর্বোচ্চ আদালতে।

দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে। তারা চাইছেন, আগামী নির্বাচনের আগে দলটি যেন তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক এবং নিবন্ধন ফিরে পায়।

আইনজীবীদের ভাষ্য: আশা এখনো বেঁচে আছে

জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একটি ‘সার্টিফিকেট আপিল’ করা হয়েছে, যা সংবিধান-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি প্রয়োজন। তবে মামলার শুনানি বিলম্বিত হয়েছে কারণ সংশ্লিষ্ট বিচারপতির দুর্ঘটনা এবং অপর পক্ষের আইনজীবীর দেশের বাইরে অবস্থান।

শিশির মনির বলেন, “আগামী ২২ এপ্রিল শুনানি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দেশের বাইরে থাকার কথা রয়েছে, তাই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।”

আরেক আইনজীবী ইমরান সিদ্দিক বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন মামলাটি এখন শুনানির শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড মামলার আপিল

সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে আপিলে এই রায় বহাল থাকে। তিনি ২০২০ সালে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন, যা বর্তমানে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ২২ এপ্রিল এই শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।

দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফেরত পাওয়ার যুক্তি

জামায়াতের আইনজীবীরা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।’ দলটি দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ব্যবহার করছে এবং সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দল গঠনের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। সুতরাং, প্রতীক ও নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

রাজনৈতিক বাস্তবতা ও অতীত অংশগ্রহণ

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম বলেন, “১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে জামায়াতের ৫৫ জন সংসদ সদস্য ছিলেন, যার মধ্যে ৫০ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী।”

তিনি বলেন, “নিবন্ধন না পাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। আশা করছি, সাংবিধানিক ও আইনানুগ পন্থায় আমরা ন্যায়বিচার পাব।”

নিবন্ধন বাতিলের পেছনের প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ২৫ ব্যক্তি। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর আপিল বিভাগ ২০২৩ সালে আপিল ও লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয়। পরে পুনর্বিবেচনার আবেদনে আপিল বিভাগ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে।