সীমান্তে পাঁচ বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৫১ বাংলাদেশি নাগরিক

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত (Bangladesh-India Border) এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (BSF)–এর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫১ জন বাংলাদেশি। এই চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আসক (Ain o Salish Kendra – ASK) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এসব হত্যাকাণ্ডের ৪০ শতাংশই ঘটেছে রংপুর বিভাগ (Rangpur Division)ে, সীমান্তঘেঁষা ছয়টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে লালমনিরহাট (Lalmonirhat) জেলায়।

রংপুর বিভাগেই প্রাণ হারিয়েছেন ৬১ জন

সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষিকাজ কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তায় যাতায়াত করতে গিয়ে বিএসএফের গুলির শিকার হয়েছেন অনেকেই। আসকের তথ্য বলছে, ১৫১ জন নিহতের মধ্যে রংপুর বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৬১ জন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাতে ঘুমাতে পারেন না। তাদের ভাষায়, “কখন গুলি করে বসে বলা যায় না। কৃষিকাজ করতে গেলেও সন্দেহ করে গুলি চালায়।”

হাসিবুল হত্যার অভিযোগ

সবশেষ ১৭ এপ্রিল সিংগীমারী সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়েন যুবক হাসিবুল। তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তার মা জানান, “ওদের রাইফেলের মাথা দিয়ে বুক খুঁচিয়ে ছেলেকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তারপর আটা বস্তার মতো ছুঁড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেছে।”

ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পরও পরিবর্তন নেই

২০১১ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়। কিন্তু আজও তার পরিবার ন্যায়বিচার পায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধে কার্যকর ও মানবিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

বিশ্লেষকদের মত

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বহা হুসাইন বলেন, “সীমান্তে কেউ অনুপ্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে চুক্তিতে, কিন্তু প্রাণনাশের কথা নয়।”

বিজিবির অবস্থান

বিজিবি (BGB) জানায়, সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, “সীমান্তের জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কেউ যাতে প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করতে টহল অব্যাহত রয়েছে।”

মানবাধিকার কর্মীদের আহ্বান

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সীমান্তে প্রতিনিয়ত নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যু প্রতিরোধে দুই দেশের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে হবে।