প্রতিবন্ধী কোটায় ছাত্রলীগ নেতাদের অবৈধ নিয়োগ, নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবন্ধী কোটায় সম্পূর্ণ সুস্থ ছাত্রলীগ নেতাকে চাকরি দেওয়া, একজনের হয়ে আরেকজনের পরীক্ষা দেওয়াসহ নানা কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

২০২২ সালের ৫ এপ্রিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নবম গ্রেডের উপ-গ্রন্থাগারিক ও ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যার মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে আফসানা আক্তার নামটি।

ময়মনসিংহের নান্দাইলের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন এর সঙ্গে আফসানার ঘনিষ্ঠতা এই প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সংস্কৃতি সচিব মনসুর আহমেদ এবং গ্রন্থকেন্দ্রের তৎকালীন পরিচালক কবি মিনার মনসুর এর সঙ্গে আফসানার যোগসাজশে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া তার অনুকূলে সাজানো হয়।

নিয়োগ পরীক্ষায় আফসানার খাতায় অন্য কারও লেখা পাওয়ার বিষয়টি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অসীম কুমার দে মেসেঞ্জারে স্বীকার করেন, যদিও তিনি খাতা দিতে অস্বীকৃতি জানান। একটি কল রেকর্ডিংয়ে আফসানার জন্মতারিখ মিলিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথাও উঠে এসেছে। আফসানা নিজেও স্বীকার করেছেন, তিনি ছাত্রলীগ এর সঙ্গে যুক্ত।

এছাড়া সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এর সুপারিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা রাসেল রানাকে ‘প্রতিবন্ধী’ কোটায় চাকরি দেওয়া হয়, যদিও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তার সহপাঠীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে, চাকরি স্থায়ী হওয়ার আগেই আফসানা ও রাসেলকে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান করেন পরিচালক মিনার মনসুর, যা অনিয়মকে বৈধতা দেয়ার অভিযোগে পরিণত হয়।

গ্রন্থকেন্দ্রে বই বিতরণ, নিয়োগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদক সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বর্তমান পরিচালক আফসানা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন।

এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমাজে একদিকে যেমন মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিচ্ছে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এমন অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণ আশা করে, এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে এবং নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।