দিনাজপুর (Dinajpur) জেলার বিরল উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়-এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে। তার ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্বপনের অভিযোগ—তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যদিও পুলিশ বলছে, এটি ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ এবং এখনও হত্যার কোনো আলামত মেলেনি।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
মামলায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন আতিকুল ইসলাম, রতন ইসলাম, মুন্না ইসলাম ও মো. রুবেল। ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদের মধ্যে আতিকুল বিরল থানার শহরগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল-এর সদস্য সচিব, রতন ইউনিয়ন বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, মুন্না ছাত্রলীগ কর্মী এবং রুবেল ইউনিয়ন ছাত্রদল-এর সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগের বিবরণ
এজাহার অনুযায়ী, ভবেশ চন্দ্র এক বছর আগে আতিকুলের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে অভিযুক্তরা মোটরসাইকেলে এসে তাকে ডেকে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় ফোনে জানানো হয়, ভবেশ অসুস্থ। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভবেশের পরিবারের দাবি, মরদেহে ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সুদ আদায়ের বিষয় নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার জামাতা রঞ্জিত রায় জানান, ফুলবাড়ী বাজারে সুদের টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে মারধর করা হয়।
প্রশাসনের বক্তব্য ও তদন্ত
বিরল থানার ওসি আবদুস সবুর জানান, মামলা গ্রহণ করে তদন্ত চলছে। দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি, তবে যেহেতু মামলা হয়েছে, নতুন করে তদন্ত হবে।
ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক টানাপোড়েন
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘পদ্ধতিগত নিপীড়নের অংশ’ বলে অভিহিত করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দাবি করেন, এটি হিন্দুদের উপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখপাত্র শফিকুল আলম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “ময়নাতদন্তে ভবেশের শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাত পাওয়া যায়নি।” এছাড়া, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ভিসেরা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।”
উপসংহার
বর্তমানে ভবেশের মৃত্যু তদন্তাধীন রয়েছে। মামলা দায়ের, ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কারণে এই ঘটনা কেবল একটি স্থানীয় মৃত্যু নয়, বরং এটি এখন কূটনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে।