বিতর্কিত তিন নির্বাচনের সিইসি এখনো অধরাই, তদন্তে ধীরগতি

শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র আমলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ (Kazi Rakibuddin Ahmed), কে এম নূরুল হুদা (KM Nurul Huda) ও কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal) নামের তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। যদিও পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে অপসারণ বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং কিছু নির্বাচনী কর্মকর্তা তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন, তবে তিনজন সিইসির বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ নির্বাচন ছিল ব্যাপকভাবে বিতর্কিত। দশম নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন সরকার দলীয় প্রার্থীরা। একাদশ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ উঠে এবং দ্বাদশ নির্বাচনকে বলা হচ্ছে ‘ডামি নির্বাচন’।

তদন্তে গতি নেই

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission) কেবল ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও তিনজন সাবেক সিইসি ও কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর তদন্ত চলছে না বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত কমিশনার ও সচিবরা

কমিশনারদের মধ্যে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন: রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. শাহ নেওয়াজ, মো. আবু হাফিজ, মো. আবদুল মোবারক প্রমুখ। তাদের কেউই এখন প্রকাশ্যে অবস্থান করছেন না। সচিবদের মধ্যে হেলালুদ্দীন আহমেদ ও জাহাঙ্গীর আলম গ্রেপ্তার হয়েছেন, ড. মুহম্মদ সাদিক পলাতক।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar) নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশন শুধু ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তদন্তের সুপারিশ করেছে। তার মতে, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল একতরফা, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না।

মামলার অগ্রগতি

২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে দায়ের হওয়া এক মামলায় তিন সাবেক সিইসি, সচিব, ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ করা হয়েছে।

টিআইবির পর্যবেক্ষণ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) (Transparency International Bangladesh)-র গবেষণায় বলা হয়েছে, সিইসিরা সরকারদলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছেন।

বিতর্কিত সিইসিদের ভূমিকায় সারাংশ:

  • **কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ২০১৪ সালের ‘বিনা ভোটের’ নির্বাচন পরিচালনা করেন।
  • কে এম নূরুল হুদা: ২০১৮ সালের ‘নিশিরাতের ভোট’ পরিচালনার মূল কারিগর।
  • কাজী হাবিবুল আউয়াল: ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ পরিচালনা করেন।

উপসংহার

জনগণের ভোটাধিকার হরণের গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিতর্কিত তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়া এবং তদন্তের ধীরগতি প্রশ্ন তুলেছে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিয়ে। নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্টরা এর দ্রুত সমাধান চাচ্ছেন।