জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি – [National Citizens’ Party]) যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর ([Gazi Salauddin Tanvir]) বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তার বিরুদ্ধে সচিবালয়ে প্রভাব বিস্তার, জেলা প্রশাসক নিয়োগে তদবির ও সরকারি কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপি তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সচিবালয়ে প্রভাব বিস্তার ও তদবির বাণিজ্য
সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের বলয় তৈরি করেছিলেন তানভীর। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে তার তদবিরে কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা গেছে।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) ([BASA]) সভাপতি ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেছেন, “তানভীরের বিরুদ্ধে সত্যতা না থাকলে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতো না।”
ডিসি নিয়োগে কোটি টাকার লেনদেন
২০২৩ সালে ৫৩ জেলায় ডিসি নিয়োগের সময় তানভীরের নাম উঠে আসে অর্থ লেনদেনের সঙ্গে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব কেএম আলী আজম ও ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদের কক্ষে ৩ কোটি টাকার চেক পাওয়া যায়। অভিযোগ ছিল এই অর্থ ডিসি নিয়োগের অগ্রিম ঘুষ।
এই ঘটনার জেরে আলী আজমকে সিলেটে এবং ড. জিয়াউদ্দিনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পাশাপাশি সিনিয়র সচিবের বিরুদ্ধেও ১০ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল, যার তদন্তের জন্য আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ([Asif Nazrul])-কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সচিবালয়ে অবস্থান
প্রায় প্রতিদিনই গাজী সালাউদ্দিনকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যেত। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ একাংশের সঙ্গে। তার সঙ্গে যুগ্ম সচিব আলী আজম গভীর রাত পর্যন্ত সচিবালয়ে থাকতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে ৪০০ কোটি টাকার কমিশনের অভিযোগ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর কাগজ সরবরাহে ৪০০ কোটি টাকার কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তানভীরের বিরুদ্ধে।
দল থেকে অব্যাহতি ও প্রশাসনিক নীরবতা
অভিযোগ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তানভীরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, এমনকি থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়নি। এনসিপি থেকে তাকে দায়িত্ব দিয়ে তার অপকর্মকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সাবেক সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার ([ABM Abdus Sattar]) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জাতির সামনে প্রকাশ করা উচিত।”