রাজধানীর বনানীতে নিরাপত্তারক্ষী দীন মোহাম্মদকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার মামলায় অভিযুক্ত মেহেদী মালেক সজীব (Mehedi Malek Sojib)–এর অস্বাভাবিক দ্রুত জামিনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। আসামি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ায় মামলা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
দ্রুত জামিনে মুক্তি, বিস্মিত বাদী
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে স্পেশাল পুটআপের মাধ্যমে জামিন নেন সজীব। একই দিন সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তিও পান তিনি। এই ঘটনার পর মামলার বাদী মনির হোসেন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও এত দ্রুত জামিনে মুক্তি পাওয়া বিস্ময়কর। এতে ন্যায়বিচার নিয়ে আমাদের সংশয় তৈরি হয়েছে।’
সজীবের রাজনৈতিক পরিচয়
মেহেদী মালেক সজীবের রাজনৈতিক পটভূমি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আব্দুল মালেক উকিল (Abdul Malek Ukil)–এর নাতি এবং তার বাবা গোলাম মহিউদ্দিন লাতু সম্প্রতি নোয়াখালী (Noakhali) সদর আসনে আওয়ামী লীগ (Awami League)–এর মনোনয়নপ্রার্থী ছিলেন।
মামলার ঘটনা ও তদন্ত
গত ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানীতে গাড়িচাপার ঘটনায় গুরুতর আহত হন দীন মোহাম্মদ। পরে ৩১ মার্চ তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর সজীব আত্মগোপনে যান এবং পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মামলার আগেই তিন লাখ টাকা দিয়ে আপসের চেষ্টা করা হয় বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর বনানী থানা (Banani Thana)–য় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে দায়িত্ব পান এসআই মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “আসামির জামিনের বিষয়ে কাগজ অনেক সময় পরে আসে, তাই বিষয়টি জানতাম না।” গুলশান বিভাগের ডিসি তারেক মাহমুদ (Tarek Mahmud) বলেছেন, “পরবর্তী ব্যবস্থা সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।”
জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, সজীবকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ ‘আইনগতভাবে ছিল না’, তাই রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তবে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি অভিযোগ করেছেন, “আসামি ভুয়া পরিচয় দিয়ে জামিন পান এবং পরে আবার বিশেষভাবে জামিন পুনরায় মঞ্জুর করা হয়।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “এভাবে জামিন দেওয়া হলে সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা (Farzana Rupa) ও শাকিল আহমেদ (Shakil Ahmed)–কে দীর্ঘদিন ধরে জামিন না দিয়ে জেলে রাখা কেন?”
প্রশ্নবিদ্ধ ন্যায়বিচার ও প্রশাসনের ভূমিকা
তদন্ত, বিচার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বাদীপক্ষ, নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিক মহলে এই জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট প্রশ্ন উঠছে—আসামির রাজনৈতিক পরিচয় কি ন্যায়বিচারে প্রভাব ফেলছে?