বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব সম্পদ ও ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবির প্রেক্ষিতে পাকিস্তান জানিয়েছে, এসব ইস্যু পূর্ববর্তী চুক্তির আওতায় নিষ্পত্তি হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামাবাদে সাংবাদিক আবদুল মজিদ চৌধুরী-এর নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ঢাকায় সাবেক হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি।
বাংলাদেশের ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের দাবি ও ক্ষমা প্রার্থনার প্রসঙ্গ
সম্প্রতি ঢাকা সফরে এফওসি-স্তরের (Foreign Office Consultation) বৈঠকে অংশ নিতে আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। এসময় বাংলাদেশ তাদের স্বাধীনতা-পূর্ব সম্পদের হিসাব অনুযায়ী ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার ও ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।
তবে এই ইস্যুতে পাকিস্তান অবস্থান জানিয়ে বলে, এসব দাবি পূর্ববর্তী চুক্তির আওতায় নিষ্পন্ন হয়েছে এবং বিষয়গুলো আবার উত্থাপনকে তারা প্রয়োজনীয় মনে করছে না।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে কূটনৈতিক সৌজন্য
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার সঙ্গে অতীতের সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইমরান সিদ্দিকি সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে ভবিষ্যতের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পারস্পরিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক শান্তির ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।’
রোহিঙ্গা সংকটে পাকিস্তানের অবস্থান
রোহিঙ্গা সংকটে পাকিস্তান বরাবরই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বলে দাবি করেন ইমরান সিদ্দিকি। তিনি জানান, জাতিসংঘ ও ওআইসিতে পাকিস্তান রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরেছে এবং মিয়ানমারে মুসলিম জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
সার্ক পুনর্জীবনে সমর্থন
সার্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি এখন অপরিহার্য একটি প্ল্যাটফর্ম। পাকিস্তান সার্ক পুনর্জীবনের আহ্বানে ইতিবাচক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
ভারতের উদ্বেগ এবং পাকিস্তানের জবাব
সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশে পাকিস্তানের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সিদ্দিকি বলেন, ‘দুটি সার্বভৌম দেশের সম্পর্ক বাইরের কোনো শক্তির বক্তব্যে প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।’
আসন্ন সফর ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এপ্রিলেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ইমরান সিদ্দিকি এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করবে।’
উভয় দেশের ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন
বাংলা ও উর্দুভাষী প্রান্তিক জনগণের উন্নয়নে ভবিষ্যতে আরও লক্ষ্যনির্ভর কর্মসূচির কথা জানান সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘অবহেলিত গোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন একটি রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।’
সার্বিক মূল্যায়ন
সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতের বাধাগুলো পেছনে ফেলে এক শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’