সাক্ষী জয়কে গাড়িতে তুলে দেওয়া বিচারকের ঘটনায় সমালোচনার ঝড়

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার রুলের শুনানিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির (Mohammad Shishir Monir)। তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতের এক বিচারক সাক্ষী দিতে আসা জয়কে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন, এমন কাজ একজন বিচারকের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে রুলের শুনানিতে এসব মন্তব্য করেন শিশির মনির।

বিচার বিভাগের পৃথকীকরণে প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা

শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে। কিন্তু বাস্তবে অধস্তন আদালতের বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের ‘দ্বৈত শাসন’ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের বিচারকরা অধস্তন আদালতের কার্যক্রম মনিটর করলেও কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। বদলি, পদোন্নতি কিংবা শাস্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তথ্য

শিশির মনির বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় কখনো ফোন করে কাকে জামিন দিতে হবে, কাকে নয়—সে নির্দেশনা দেয়। এমনকি বদলির জন্য মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত দিলে বলা হয় আগে অমুক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে।”

তিনি বলেন, “দুদক সম্প্রতি ঢাকার সিএমএমসহ ১৫ জন বিচারকের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছে। এরা নিজেরাই নির্যাতনের শিকার ছিলেন, আবার অনেক সময় অদৃশ্য হাতের নির্দেশে অন্যদেরও নিয়ন্ত্রণ করতেন।”

জয়কে গাড়িতে তুলে দেওয়ার ঘটনা

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “একজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলে, বিচারক সাহেব এজলাস থেকে নেমে এসে তাঁকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন—যেন তার মান ক্ষুণ্ন না হয়। বিচারক ওই ১৫ জনের মধ্যেই একজন।”

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শিশির মনির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হওয়া এসব বিচারকদের কাছ থেকে এমন কাজ একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।”

শুনানির পরবর্তী তারিখ

রুলের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।