দেশের বিচার বিভাগে সবচেয়ে বিতর্কিত নাম এবিএম খায়রুল হক ([ABM Khairul Haque])। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিচার বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর বিতর্কিত রায়সহ একাধিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় তৈরি করেছেন।
২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির পথ প্রশস্ত করেন খায়রুল হক। যদিও শুনানিতে অনেক প্রবীণ আইনজীবী এর বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেন। এমনকি পূর্ণাঙ্গ রায়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা সংযোজন করে সরকারের স্বার্থরক্ষা করেন।
আইন পেশায় ২৫ বছর পর ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তাঁর ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আপিল শুনানি নিয়ে বিব্রতবোধ করে অনেক বিচারক সরে দাঁড়ালে তাঁকে নিয়োগ দেন শেখ হাসিনা ([Sheikh Hasina])। পরে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত সিদ্ধান্তও নেন তিনি।
এছাড়া প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ([Supreme Court])-এর দফতরে প্রথমবার কোনো রাজনৈতিক নেতার ছবি (শেখ মুজিবের) টাঙান, যা আগে কখনো ঘটেনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার অজুহাতে একাধিকবার অর্থ গ্রহণের অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকা জমা দেন, যা পরে ৯ লাখ টাকা তুলে নেন।
আইনজীবী মনোয়ার হোসাইন বলেন, “বিচার বিভাগের ধ্বংসের অন্যতম কারিগর খায়রুল হক। আইনবহির্ভূত রায় দিয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন।” সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরুল কায়েস রানা মনে করেন, “গণহত্যার নেপথ্যে খায়রুল হককেও বিচারের আওতায় আনা উচিত।”
জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে হাসিনার পতনের পর তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। তাঁর কর্মকাণ্ডের কারণে বিচার বিভাগের উপর জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।