ভারতীয় সাপ্তাহিকী দ্য উইক (The Week) চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party)–এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)–কে নিয়ে একটি কাভার স্টোরি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘ডেসটিনি’স চাইল্ড’ বা ‘নিয়তির সন্তান’।
কাভার স্টোরির মূল প্রতিপাদ্য
দ্য উইক ম্যাগাজিনের নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজা’র লেখা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় সরকার পরিবর্তন তারেক রহমান–এর দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জীবিত করেছে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman) এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)–র পুত্র তারেক যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–এর নেতৃত্ব নিতে পারেন এবং আসন্ন নির্বাচনে দলের মুখপাত্র হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকার কর্তৃক বিএনপি ভাঙার চেষ্টা সত্ত্বেও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক যাত্রা
৫৭ বছর বয়সী তারেক এখন তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেয়ার পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন, তবে ঢাকায় তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে।
তারেকের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, ‘তারেক ইতিমধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেছেন।’ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার (Dr. Ziauddin Haider) বলেন, ‘আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই।’
নির্বাসন এবং নতুন সুযোগ
পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী (Asif Bin Ali) বলেন, ‘তারেক নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল।’ ১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হন—তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো (Arafat Rahman Koko)–কে হারান এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।
তারেক ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্নিবাচিত হন। এরপর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তারেকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন।
অতীত থেকে বর্তমান
তারেক ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরে ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন, যখন বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। যদিও সরকারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও, তার ওপর ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। ২০০৭ সালে সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারেক ও তার মাকে বন্দি করে। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে চলে যান।
ভবিষ্যতের অপেক্ষা
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন তারেকের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছে। প্রশ্ন রয়ে গেছে—তিনি কি তার পূর্বসূরিদের ধারা ভেঙে একটি নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারবেন?