রাজকীয় উত্থান হলেও স্বাভাবিক পতন: বিলীনের পথে ‘কিংস পার্টি’ দলসমূহ

২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন (One-Eleven) পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কিংস পার্টি ([Kings Party])-খ্যাত রাজনৈতিক দলগুলোর রাজকীয় উত্থান হলেও পতন হয়েছে অত্যন্ত স্বাভাবিক গতিতে। প্রথমদিকে বড় বড় কার্যালয়, সাড়ম্বর প্রচারণা থাকলেও এখন অধিকাংশ দল হারিয়ে গেছে কিংবা ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে।

ওয়ান-ইলেভেনের পর গঠিত কিংস পার্টিগুলো

ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে গঠিত উল্লেখযোগ্য কিংস পার্টিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর ([Ferdous Ahmed Qureshi]) নেতৃত্বে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি ([Progressive Democratic Party – PDP]), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ([Syed Muhammad Ibrahim])-এর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ([Bangladesh Kalyan Party]) এবং কাজী ফারুক আহম্মদের ([Kazi Faruq Ahmed]) ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন

পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ আমলেও গঠিত হয় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ([Bangladesh Nationalist Front – BNF]), তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি

পতনের কারণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাইফুল ইসলাম ([Dr. Saiful Islam]) বলেন, “রাজনৈতিক দল তৈরি হয় জনগণের প্রয়োজন ও সমর্থনে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত দলগুলো কখনোই জনগণের হৃদয় জয় করতে পারে না।” তার মতে, কিংস পার্টিগুলোর ব্যর্থতা ছিল জনসমর্থন না পাওয়া এবং কৃত্রিমভাবে টিকে থাকার চেষ্টা।

বর্তমান অবস্থা

  • পিডিপির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে এবং সংগঠন প্রায় বিলুপ্ত।
  • কল্যাণ পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত, সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই।
  • বিএনএফের প্রধান নেতা আবুল কালাম আজাদ হারিয়ে গেছেন, কার্যক্রম নেই।
  • তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএসপি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কার্যত বিলুপ্ত।

এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আট মাসে অন্তত ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ([National Citizen Party – NCP])। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব দলের অধিকাংশের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে।

উপসংহার

রাজকীয় উত্থান হলেও জনসমর্থনহীন হওয়ায় ‘কিংস পার্টি’ গুলো ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হতে বসেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নতুন দল গঠনের প্রবণতা ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি মাত্র।