যশোরের চৌগাছা ([Chaugachha]) উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম দৌলতপুর ([Daulatpur])-এ ‘ইন্ডিয়ানপাড়া’ নামে পরিচিত একটি এলাকায় বসবাস করেন ভারতের নাগরিকরা, যারা কার্যত বাংলাদেশের মাটিতেই জীবিকা ও জীবনযাপন করে যাচ্ছেন—এবং তা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও সহানুভূতির কারণে।
এই ইন্ডিয়ানপাড়ায় ১৯টি পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছেন। তাদের জমি, বাজার, স্কুল, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সবই বাংলাদেশে। তারা ভারতের নাগরিক হলেও বাংলাদেশিদের সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ্যে মিলেমিশে বসবাস করছেন। এমনকি ঈদ ও জুমার নামাজে তারা বাংলাদেশের মসজিদ ও ঈদগাহেই অংশগ্রহণ করেন।
জানা যায়, আশির দশকে সীমান্তে বিএসএফ ([BSF]) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলেও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শূন্যরেখা থেকে দেড়শ গজ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে বাধ্য হয়। এর ফলে ভারতের যে ভূখণ্ডটি দৌলতপুর গ্রামের পাশে পড়ে, তা কাঁটাতারের বাইরে থাকায়, ওই অংশের ভারতীয় নাগরিকরা প্রতিদিন কয়েকবার সীমিত সময়ের জন্য ভারতের অভ্যন্তরে যাতায়াত করতে পারেন। তবে তাদের প্রধান নির্ভরশীলতা এখন বাংলাদেশ।
এখানকার ভারতীয় নাগরিক নূর হোসেন জানান, ফসল বিক্রি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা এমনকি মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত—সবকিছুই বাংলাদেশকেন্দ্রিক। অনেকেই বলেন, কখনো কোনো বাংলাদেশি তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করেননি। কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে গণমাধ্যমে কথা বলতে কিছুটা ভয় পান তারা, বিশেষ করে বিএসএফের টহল বা প্রশ্নবাণের ভয়ে।
এই অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবি ([BGB]) ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ অনেক সহনশীল, কর্ডিয়াল। আমার দায়িত্বকালে দৌলতপুর এলাকায় কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। সেখানে দুই দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করে।”
এমন সহাবস্থানের এক অনন্য নজির হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এই সীমান্ত গ্রাম। যেখানে ‘বাংলাদেশি’ ও ‘ভারতীয়’ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে এবং ভালোবাসা দিয়েছে।