ড. ইউনূস (Dr. Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আকার ও অতিরিক্ত নিয়োগ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও সাবেক নীতিনির্ধারক মাহমুদুর রহমান। ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই স্বল্পমেয়াদি সরকারে কীভাবে এত বিপুলসংখ্যক উপদেষ্টা, সহকারী ও কমিশনের প্রয়োজন হয় এবং এসব নিয়োগে কী ধরনের যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
বিপ্লব ও সরকারের আত্মপরিচয় নিয়ে মূল্যায়ন
মাহমুদুর রহমান বলেন, “একজন ফ্যাসিস্ট শাসক ও তার হেজেমনিক প্রভুর বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফল আজকের ড. ইউনূস সরকার।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনে অসংখ্য তরুণ জীবন দিয়েছে, এবং এই সরকারের বৈধতা জনগণের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল।
অতিরিক্ত নিয়োগ ও দায়বদ্ধতার প্রশ্ন
লেখকের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অধিকাংশই শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন এবং সরকারের পতনের পরও তাদের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। মাহমুদুর রহমান বলেন, “৮ আগস্ট যাত্রা শুরুর পর থেকে উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়তেই আছে। সর্বশেষ হিসেবে উপদেষ্টা ও সহকারীদের সংখ্যা ৪৮ জনে পৌঁছেছে।”
তালিকাটি এমন:
– প্রধান উপদেষ্টা: ১ জন
– উপদেষ্টা: ২৩ জন
– প্রধান উপদেষ্টার সহকারী: ৩ জন
– বিশেষ সহকারী: ৬ জন
– সংস্কার কমিশন প্রধান: ১৫ জন (প্রায়)
মোট: ৪৮ জন
তিনি প্রশ্ন করেন, “এই স্বল্প মেয়াদে এই বিশাল প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা কী?” তার মতে, নতুন পদ সৃষ্টি না করে অকার্যকরদের বরখাস্ত করা উচিত।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দাবি
মাহমুদুর রহমান বলেন, “যেহেতু এই সরকার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নয়, তাদের প্রত্যেক নিয়োগ জনগণের কাছে জবাবদিহির আওতায় আসা উচিত।” তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতিমাসে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে অগ্রগতি তুলে ধরবেন।
ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও ভবিষ্যতের শঙ্কা
তিনি আরও বলেন, “যদি এই নিয়োগব্যবস্থা মেধার চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কোটা বা পছন্দনির্ভর হয়, তবে তা বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি হবে।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও লেখক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো আলোচনা দৃশ্যমান নয়।
জনপ্রিয়তা বনাম বাস্তবতা
ড. ইউনূস বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও মাহমুদুর রহমান সতর্ক করে বলেন, “এই দেশে জনপ্রিয়তা ক্ষণস্থায়ী। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বলতে পারি, জনপ্রিয় নেতারাও খুব অল্প সময়েই জনরোষের মুখে পড়েছেন।” তিনি উদাহরণ দেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ঢাকায় উদযাপনের প্রসঙ্গ এবং জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-এর স্থায়ী জনপ্রিয়তা।
রাজনৈতিক ভারসাম্য ও সময়সীমা
মাহমুদুর রহমান বলেন, “ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাই বর্তমান সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৪ মাস। এর মধ্যে এই বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো অপ্রয়োজনীয়।”
উপসংহার ও সতর্কবার্তা
তিনি লেখেন, “কোনো কারণে এই সরকার ব্যর্থ হলে, সেই ব্যর্থতার একক দায় ড. ইউনূসের ওপরই বর্তাবে। তার উপদেষ্টারা ইতিহাসের ফুটনোটেও স্থান পাবে না।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।