সরকারি চাকরিজীবীরা রাজপথে বা সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভে অংশ নিলে কোনো তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুতি হতে পারে—এমন বিধান যুক্ত করে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ (Government Service Act, 2018) সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়েছে, আট দিনের মধ্যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে, এমনকি পদাবনতি বা বেতন কর্তনের মতো শাস্তিও দেওয়া হতে পারে।
আইনের খসড়ায় কী থাকছে?
সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি অবস্থান কর্মসূচি, কর্মবিরতি বা কর্মস্থলে বাধা দেন, তাহলে তা তদন্ত ছাড়াই অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অভিযুক্তদের দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে এবং সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (Ministry of Public Administration) সূত্র জানায়, প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সংশোধিত খসড়া শিগগির উপস্থাপন করা হবে উপদেষ্টা পরিষদে।
কেন এই পরিবর্তন?
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর অনেক কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান, বিদেশে চলে যান বা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। অনেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এসব পরিস্থিতি রোধ করতেই আইনের এই কঠোর সংশোধনের উদ্যোগ।
চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
কর্মকর্তারা বলছেন, এই আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে। কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি ‘ফ্যাসিবাদী আইন’ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এক জেলা প্রশাসক, যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন, বলেন, “আমার চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়নি। নতুন আইন হয়তো আমাকে বাধ্য করবে চাকরি ছাড়তে।”
বর্তমানে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’-এর ৪৫ নম্বর ধারা অনুসারে, ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার কাউকে অবসরে পাঠাতে পারে। কিন্তু সংশোধনের পর নোটিশ দিয়েই কাউকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “দায়িত্বে গাফিলতি হলে শাস্তি দিতে হবে ঠিকই, তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।”
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “আইনের অপব্যবহার রোধে সরকারের উচিত সুনির্দিষ্ট গ্যারান্টি দেওয়া।”
প্রশাসনে ওএসডি ও আন্দোলন
২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের (Police) ৮২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে একযোগে ওএসডি করা হয়। তারা এখনো চাকরিতে থাকলেও আইনের পরিবর্তন হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর নেতারা সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সংগঠনের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, “এ সরকার গণতন্ত্রের কথা বলে, অথচ কর্মচারীদের মুখ বন্ধ করতে চায়—এটা ফ্যাসিবাদের নমুনা।”