মানবিক করিডোর নিয়ে সিদ্ধান্তের এখতিয়ার শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সংসদের হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির (BNP) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের জন্য করিডোর খোলার মতো স্পর্শকাতর জাতীয় সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সংসদ থেকে আসতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (১ মে) ঢাকার নয়াপল্টনে (Nayapaltan) জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল (Jatiyatabadi Sramik Dal) আয়োজিত মে দিবসের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ বক্তব্য দেন।
‘বাংলাদেশের স্বার্থ আগে, নয় ভারত-পাকিস্তান-মিয়ানমার’
তারেক রহমান বলেন, “বিদেশি স্বার্থ নয়, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত, পাকিস্তান কিংবা মিয়ানমার নয়—সবার আগে বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, “১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী। তারা দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের মেরুদণ্ড। অথচ গণতান্ত্রিক সরকার না থাকার কারণে এই জনগণ এখনো তাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে পারছে না।”
“সংস্কারে শ্রমজীবীদের কণ্ঠস্বর কোথায়?”
বর্তমান সংস্কার উদ্যোগে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা উপেক্ষিত—এ অভিযোগ তুলে তারেক বলেন, “দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চললেও সেখানে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর নেই। রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার, তেমনি জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে, যা সঠিক পথ নয়। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবিলম্বে একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।”
“বিএনপি ক্ষমতায় থেকেও কাউকে বিদেশে পালাতে হয়নি”
তিনি বলেন, “বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, কিন্তু কাউকে বিদেশে পালাতে হয়নি। কারণ বিএনপি জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।”
নয়াপল্টনে জনসমুদ্রে পরিণত শ্রমিক সমাবেশ
বেলা ২টার দিকে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হওয়া সমাবেশে হাজারো শ্রমিক অংশ নেয়। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছিল জমায়েত। শ্রমিকদের হাতে রঙিন ব্যানার, মাথায় লাল টুপি, গায়ে টি-শার্ট—সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
স্লোগান ওঠে—‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’, ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে দিতে হবে’।
শ্রমিক দলের ১২ দফা দাবি
পূর্বঘোষিত ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi)। দাবিগুলো হলো:
– অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন
– ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের বিচার
– সব প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার
– বন্ধ শিল্প চালু ও নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা
– আউটসোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী পদ সৃষ্টি
– অবাধ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার
– শ্রমিক হত্যার বিচার ও নির্যাতন বন্ধ
– নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা
– জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা
– বৈষম্যহীন জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা
– জরুরি পরিষেবা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল
– খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস
শীর্ষ নেতারা উপস্থিত
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir), স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (Mirza Abbas), শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।