শ্রমিকের ঘামঝরা টাকায় স্বপন-আমিনের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও বৈদেশিক সম্পত্তি গড়ার কাহিনি

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে শ্রমিকদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন রুহুল আমিন স্বপন (Ruhul Amin Swapan) ও আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর (Aminul Islam bin Amin Noor)। দেশে-বিদেশে অট্টালিকা, গাড়ি, জমি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তারা। এই আন্তর্জাতিক প্রতারণা সিন্ডিকেটের সদস্যরা গরিব শ্রমিকদের রঙিন স্বপ্নকে পরিণত করেছেন দুঃস্বপ্নে।

স্বপ্নের আড়ালে প্রতারণা

দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জমি বিক্রি, গহনা বিক্রির শেষ সঞ্চয়। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। অথচ এই টাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বিলাসী জীবন।

কে এই রুহুল আমিন স্বপন?

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) (BAIRA)-এর সাবেক মহাসচিব স্বপন আশির দশকে দালাল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ‘ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল’ গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনায় বহুবার অফিস পরিবর্তন করতে হয় তাকে। ২০০৫ সালে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গঠন করেন একটি আন্তর্জাতিক ভুয়া ভিসা সিন্ডিকেট।

বিলাসবহুল সম্পদ

স্বপনের ঢাকার বারিধারা (Baridhara)-তে রয়েছে ৯ তলা বাড়ি (মূল্য আনুমানিক ১৪০ কোটি টাকা), বনানী (Banani)-তে রয়েছে তিনটি বাড়ি (মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা), উত্তরা (Uttara)-তে ভবন, বনশ্রী (Banasree)-তে বাড়ি, এবং মাদানী এভিনিউ (Madani Avenue)-তে শত শত কোটি টাকার জমি। এছাড়াও রয়েছে গাজীপুর-এর (Gazipur) শিলমুন এলাকায় হাসপাতাল ও বিভিন্ন জায়গায় জমি। বিদেশে—দুবাই, লন্ডন, সৌদি আরব, কানাডামালয়েশিয়ায়—বিনিয়োগ রয়েছে তার। বর্তমানে স্বপন কানাডার টরন্টো (Toronto) ও মিসিসাগায় বসবাস করছেন।

মালয়েশিয়ায় দাতো আমিনের সিন্ডিকেট

দাতো আমিন নব্বইয়ের দশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মালয়েশিয়ায় যান। চতুরতায় গড়ে তোলেন ভুয়া পাসপোর্ট সিন্ডিকেট, হাতিয়ে নেন শ কোটি টাকা। তিনি এখন মালয়েশিয়ার নাগরিক এবং ‘দাতো শ্রী’ উপাধিধারী। তার মালিকানায় রয়েছে ১৯টি কোম্পানি, যার মাধ্যমে অর্থ পাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: Bestinet IT Solutions, TFG Group, Crystal Clear Technology, G3 Technologies, Joint Resources Employment Agency প্রভৃতি।

পাচার ও তদন্ত

স্বপনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (ACC) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (NBR)-এর তদন্ত শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালের মধ্যেই স্বপন মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাজ্যে ১২৩ কোটি টাকা পাচার করেন।

অভিযোগের পরিণতি কী?

স্বপন বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “স্যার কানাডায় রয়েছেন, আপনি যোগাযোগ করলে পাবেন।”