এই বয়সে সবাইকে সাবধান করছি, দেশকে বিভক্ত করবেন না: ফরহাদ মজহার

ইসলামী জাতিবাদ এবং বাঙালি জাতিবাদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন কবি, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার (Farhad Mazhar)। তিনি বলেন, “এই বয়সে সবাইকে সাবধান করে যাচ্ছি, দেশকে বিভক্ত করবেন না।” বুধবার রাতে পঞ্চগড় (Panchagarh) সরকারি অডিটোরিয়ামে কারিগরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী জাতিবাদ নিয়ে সতর্কতা

বক্তৃতায় ফরহাদ মজহার বলেন, “বাঙালি জাতিবাদ এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে, কিন্তু তার জায়গা নিতে এসেছে ইসলামী জাতিবাদ, যা মুসলিম ছাড়া অন্য সবাইকে শত্রু মনে করে। এ জাতিবাদ দেশে গৃহযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে।”

তিনি বলেন, “৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির যে সংগ্রাম, তা কোনো মতাদর্শ বা রাজনৈতিক পন্থা দিয়ে অস্বীকার করা যাবে না। ইসলামী কিংবা বাঙালি—কোনো জাতিবাদের মাধ্যমে সমাজকে বিভক্ত করা যাবে না।”

শিক্ষিত ঐক্যের আহ্বান

তিনি আরও বলেন, “দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে আমাদের চিন্তা ও মতাদর্শ পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে ভাবতে শিখতে হবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতিই হতে পারে এই পথের মূল শক্তি।”

ফরহাদ মজহার বলেন, “আমি মুসলমান, ইসলাম আমার ধর্ম। কিন্তু একইসঙ্গে আমি বাংলা ভাষাভাষী এবং সংস্কৃতির ধারক। এই দুই থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে পারবে না।”

৭১-এর চেতনা ও বর্তমান বাস্তবতা

তিনি বলেন, “আমরা ৭১-এ কোনো ভুল করিনি। সেই ইতিহাস মুছে দিতে চাইলে তা হবে ভয়াবহ ভুল। আমাদের বিভাজন দূর করতে হবে, না হলে দেশ আবার গৃহযুদ্ধের দিকে যাবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা

ফরহাদ মজহার বলেন, “২৪-এর আন্দোলনে আমরা বিজয় অর্জন করলেও তা পুরোপুরি পূর্ণ হয়নি। কারণ আমরা একটি পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনেই নতুন সরকার গঠন করেছি। আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমতায় রয়েছে সংবিধানের ছায়ায়।”

তিনি অভিযোগ করেন, “ছাত্ররা একটি নতুন রাষ্ট্রঘোষণা দিতে চাইলেও তা দিতে দেননি ড. ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। এটা তিনি ঠিক করেননি। দ্রুত প্রতিশ্রুত ঘোষণাটি দিতে হবে।”

নতুন রাষ্ট্র গঠনে আহ্বান

তিনি বলেন, “ভুল স্বীকার করে, বিরোধ মীমাংসা করে আমাদের নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে এগিয়ে যেতে হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন

অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন সরকার হায়দার এবং বক্তব্য দেন লেখক গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে নাট্যদল ‘ভূমিজ’ ও ‘কারিগর’-এর পরিবেশনায় পরিবেশ ও যুদ্ধবিরোধী গান পরিবেশিত হয়।