দিল্লির তাবেদার হতে নয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্যই বাংলাদেশ পিন্ডি ত্যাগ করেছে: তারেক রহমান

বিএনপি (BNP)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) বলেছেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পিন্ডি (Pindi) ত্যাগ করেছিল স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য, দিল্লির তাবেদার হওয়ার জন্য নয়।”

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব (National Press Club)-এ আমার বাংলাদেশ পার্টি (AB Party)’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

৭১ থেকে ২৪: বাংলাদেশের স্বাধীনতার বার্তা

তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে দুটি উল্লেখযোগ্য অর্জন—৭১ সালের স্বাধীনতা ও ২০২৪ সালের জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা। শহীদদের আত্মত্যাগের এই রাজনৈতিক বার্তা হলো, বাংলাদেশ কখনোই তাবেদারি রাষ্ট্র হতে পারে না।”

তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা এই বার্তাই দিয়েছিল। তবে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ দেড় দশক ধরে এক স্বৈরশাসক বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন।

তাবেদার অপশক্তি ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

তারেক রহমান বলেন, “ভবিষ্যতে যেনো পরাজিত তাবেদার অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যেন কখনোই এই অপশক্তিকে গ্রহণ না করে।”

তিনি ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের প্রতিরোধ-সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রতিটি আন্দোলনেই জনগণ শহীদ হয়েছে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নই হচ্ছে রাজনীতিকদের প্রধান দায়িত্ব।

জনগণের ক্ষমতায়ন ও ভোটাধিকারের দাবি

তারেক রহমান বলেন, “নাগরিকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাই দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রধান উপায়। স্থানীয় থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”

তিনি বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, আর সেই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

অবৈধ সরকার, স্বৈরাচার ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “সংবিধান লঙ্ঘন করে তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করেছে এক পলাতক স্বৈরাচার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এই দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?”

তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে স্বৈরাচারপন্থীদের পুনর্বাসনের সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানান। বলেন, “এটি হতে পারে তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ, যা দায়ীদের আরও সক্রিয় করে তুলবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান

তারেক রহমান বলেন, “সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটি গণতন্ত্রের জন্য অপমানজনক। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দ্ব্যর্থহীন রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।”

তিনি বলেন, জনগণের রায়ে গঠিত সরকারই কেবল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারে। বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহ দিলে তা শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হবে।

অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য

আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party)’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (Saiful Haque), গণসংহতি আন্দোলন (Gonosonghoti Andolon)’র প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (Zonayed Saki), গণ অধিকার পরিষদ (Gonodhikar Parishad)’র সভাপতি নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur), জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens Party)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) এবং খেলাফত মজলিস (Khelafat Majlish)’র আমির মামুনুল হক (Mamunul Haque)।