ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (Kashmir)’র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় স্বামীকে হারিয়েছেন ঐশান্যা দ্বিবেদী (Aishanya Dwivedi)। তিনি বলেন, “যে সরকারের ভরসায় আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারা আমাদের অনাথের মতো ফেলে রেখেছে।”
চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ঐশান্যার চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তার স্বামী শুভম দ্বিবেদী (Shubham Dwivedi)। ঘটনাটি ঘটেছিল ভ্রমণের শেষ দিনে। কাঁদতে কাঁদতে ঐশান্যা বলেন, “আমার চোখের সামনে আমার পৃথিবীকে হারাতে হয়েছে। কেউ যেন এমন দিন না দেখে।”
‘আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের ছিল’
ঐশান্যার অভিযোগ, ঘটনার সময় আশপাশে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। তিনি বলেন, “ঘরের ভেতরে বাবা-মা আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু ঘরের বাইরে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তো সরকারের।” ঐশান্যার মতে, সরকারের নিরাপত্তা ঘাটতির কারণেই তার স্বামী শহীদ হয়েছেন, তাই শুভমকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
পরিবার বলছে, শুভমই প্রথম গুলিবিদ্ধ হন
ঐশান্যার বক্তব্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা প্রথম গুলি চালায় শুভমের মাথার বাঁদিকে। তার কারণেই আশপাশের ১০০–১৫০ জন পর্যটক দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, শুভমের আত্মত্যাগই অনেকের জীবন বাঁচিয়েছে।
‘সরকার নিরাপদ বলেছিল, কিন্তু আমাদের জন্য তা কাল হয়ে দাঁড়াল’
শুভমের স্ত্রী বলেন, “সরকার বলেছিল কাশ্মীর এখন নিরাপদ, ৩৭০ ধারা উঠে গেছে। তাই দুশ্চিন্তা ছাড়াই আমরা কাশ্মীরে গিয়েছিলাম।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “জানি না আমাদের পৃথিবী সেখানে শেষ হয়ে যাবে।”
‘সন্ত্রাসীদের রাগ ছিল সরকারের ওপর, কিন্তু মরেছে নিরীহ মানুষ’
ঐশান্যা বলেন, হামলাকারীরা শুভমকে গুলি করার পর বলেছিল, “তোমার সরকারকে বলো আমরা কী করেছি।” ঐশান্যার মতে, “ওদের রাগ ছিল সরকারের ওপর, কিন্তু মারা হলো নিরীহ মানুষকে।”
নববিবাহিত যুগল, প্রথম পারিবারিক সফরেই বিপর্যয়
উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)’র কানপুর জেলার বাসিন্দা শুভম দ্বিবেদী মাত্র কয়েক মাস আগেই ঐশান্যার (Aishanya) সঙ্গে বিয়ে করেন। প্রথমবারের মতো তারা পরিবারসহ ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। ফিরে আসার কথা ছিল ২৩ এপ্রিল, কিন্তু ২২ এপ্রিলেই ঘটে যায় ভয়াবহ সেই ঘটনা।
পরিবারের অভিভাবকদের হতবিহ্বল অবস্থা
শুভমের বাবা সঞ্জয় কুমার দ্বিবেদী (Sanjay Kumar Dwivedi) বলেন, “আমার ছেলে সারা বিশ্ব ঘুরে নিরাপদে ফিরেছে। অথচ নিজের দেশেই তাকে হত্যা করা হলো।” শুভমের মা গভীর শোকে নিঃশব্দ হয়ে পড়েছেন।
আতঙ্কের সেই মুহূর্তের বিবরণ
ঐশান্যার বোন সম্ভাবী জানান, মাত্র ১০ মিনিট আগেই তারা সেখানে পৌঁছেছিলেন। হঠাৎ একজন ব্যক্তি এসে শুভমকে জিজ্ঞেস করে, ‘হিন্দু না মুসলিম?’ তখনই গুলির শব্দ শোনা যায় এবং শুভম গুলিবিদ্ধ হন।
সম্ভাবী বলেন, “ওই ব্যক্তি গুলি চালাতেই চারদিকে হুলস্থুল পড়ে যায়। আমি দিদিকে টেনে গেটের বাইরে নিয়ে আসি।” তাদের মতে, যদি শুভম প্রথম গুলিবিদ্ধ না হতেন, তাহলে বাকিরা পালাতে পারতেন না।
শুভমের আত্মত্যাগ যেন না হয় বিস্মৃত
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা চান, শুভমের আত্মত্যাগ যেন দেশের মানুষ ভুলে না যান। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, শুভমকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক এবং কাশ্মীরসহ দেশের প্রতিটি প্রান্তে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।