ভারত (India) ও পাকিস্তান (Pakistan)-এর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার পর। এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন চীন (China)’র দিকে। কারণ, চীন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হলেও ভারতেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার।
ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চীন
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ফোনে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসাক দার (Ishaq Dar)-কে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, চীন উভয় দেশকে সংযত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে চীন নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ওপর জোর দিয়ে এই হামলার নিন্দা করেছে। এতে স্পষ্ট, চীন সরাসরি কোনো পক্ষ নিচ্ছে না; বরং মধ্যস্থতামূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক
চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক বহু পুরনো ও কৌশলগত। সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক—সব ক্ষেত্রেই এই সম্পর্ক সুদৃঢ়। পাকিস্তানের অস্ত্র আমদানির ৮১ শতাংশ চীন থেকে আসে এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ পাকিস্তানকে তাদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা সহায়তা
চীন পাকিস্তানকে কেবল অস্ত্র নয়, উপগ্রহ প্রযুক্তি, নজরদারি ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়েও সহায়তা করে। পাকিস্তানই বিশ্বের প্রথম দেশ যা চীনের বাইডু স্যাটেলাইট ব্যবহার শুরু করে। এ ছাড়া, FATF (Financial Action Task Force)-এ পাকিস্তানকে কালো তালিকায় পড়া থেকে চীন কৌশলগতভাবে রক্ষা করেছে।
সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম
তবে সব কিছুর পরও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন সরাসরি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়াবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে থাকা চীন চায় না দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কোনো সামরিক জটিলতা তৈরি হোক। ভারত তাদের একটি বড় বাণিজ্যিক বাজার ও বিনিয়োগ ক্ষেত্র। ফলে ভারতকে শত্রু বানানো চীনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সীমিত সহায়তা, কৌশলগত অবস্থান
যুদ্ধ হলে চীনের ভূমিকা হতে পারে সীমিতভাবে সহায়ক—যেমন অস্ত্র সরবরাহ, গোয়েন্দা তথ্য প্রদান, আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন ইত্যাদি। তবে চীন সামরিকভাবে মাঠে নামবে না। এমনকি পাকিস্তানও জানে, চীনের সহায়তা মূলত পরোক্ষ ও কৌশলগত হবে।
চীন চাইবে—একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে। ফলে যুদ্ধের ক্ষেত্রেও চীন থাকবে এক প্রকার ‘নীরব সমর্থকের’ ভূমিকায়, কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো সামরিক জড়িততা নেবে না।