রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য ও অনাস্থার অবসান ঘটাতে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)–এর প্রস্তাবনায় মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় আসন্ন নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মতবিরোধ দূর না হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়তে পারে।
কমিশনের প্রস্তাব ও মতানৈক্য
১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত এই কমিশন ছয়টি খাতে মোট ১৬৬টি সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন। কমিশন এখন পর্যন্ত ১৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং জুলাই মাসে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দলগুলোর অবস্থান
বিএনপি (BNP) বেশ কিছু প্রস্তাবে একমত হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছে। যেমন, সংবিধানে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের মূল্যায়নকে সমান গুরুত্ব দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা, সংখ্যানুপাতিক ভোট ব্যবস্থা ইত্যাদি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party) ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিকে সমর্থন জানিয়েছে এবং সংবিধান পুনর্লিখনের আহ্বান জানিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) চাইছে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান’ পুনঃস্থাপন।
বিশ্লেষকদের মত
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “গত ৫৩ বছরে মানুষের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক আশা জন্মেছে, এখন সময় এসেছে সেই আশা বাস্তবে রূপ দেওয়ার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, “সব দলে মতানৈক্য থাকা স্বাভাবিক। যতটুকু সম্ভব একমত হওয়া জরুরি, তা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিমত
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khosru Mahmud Chowdhury) বলেন, “সবাইকে একমত করতে চাওয়া একটি বাকশালী চিন্তা।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদার সঙ্গে ২০২৪ সালের তুলনা করা ঠিক নয়।”
একমতের দিক
বিএনপি সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, বহুত্ববাদী সংবিধান, অন্তর্বর্তী সরকার সীমিত সদস্যে গঠনের মতো বিষয়ে একমত। এনসিপি চাইছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্য, এবং প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান আলাদা ব্যক্তি হোক।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
ভিন্নমত থাকা রাজনৈতিক বাস্তবতার অংশ হলেও, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা না হলে নির্বাচন অনিশ্চিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে আসার আশঙ্কাও বাড়বে।
সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর