বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তনে রাজনীতিতে আসছে নাটকীয় মোড়

দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia)–র দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে। আগামী ৫ মে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে ঢাকা (Dhaka) পৌঁছাবেন। তার সঙ্গে ফিরছেন দুই পুত্রবধূ—ডা. জোবাইদা রহমান (Dr. Zubaida Rahman) ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান (Syeda Sharmila Rahman)—এবং তিন নাতনী: ব্যারিস্টার জাইমা রহমান (Barrister Jaima Rahman), জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান।

রাজনীতিতে ফিরছেন বেগম জিয়া

চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে রাজনীতির ময়দানে ফিরতে যাচ্ছেন বেগম জিয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। তার সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছেন সকল রাজনৈতিক দল ও নেতারা।

ইউনূস-খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ঐক্য

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এবং বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে গভীর রাজনৈতিক ও মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১০ সালে ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে বেগম জিয়া সংসদে কঠোর বক্তব্য দেন। গত বছরের সেনাবাহিনী দিবসে সেনানিবাসে ইউনূসের সঙ্গে তার আবেগঘন সাক্ষাৎ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দেয়।

রাজনীতির পালাবদল

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ এর মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোতে নেতৃত্বের সংকট ও বিভাজন এ নির্বাচনকে ঘিরে জটিলতা তৈরি করছে।

জিয়া পরিবারের প্রভাব

তারেক রহমান (Tarique Rahman) এর নেতৃত্বে বিএনপি (BNP) চললেও বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছিল। তার প্রত্যাবর্তনে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতিটি সদস্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছেন।

অতীতের প্রেক্ষাপট

২০১৮ সালে তথাকথিত দুর্নীতির মামলায় বেগম জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়। এরপর গুলশানে তার বাসভবনে তাকে সীমিতভাবে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্বাস্থ্যগত কারণ ও বৈশ্বিক চাপের মুখে তাকে বিদেশে যেতে না দিলেও তিনি নীরবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। বর্তমান সরকারের সুপারিশে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন (Mohammad Shahabuddin) এক আদেশে তাকে মুক্তি দেন এবং আদালত পূর্বের রায় বাতিল করেন।

নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি

দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Home Ministry) এবং পুলিশ সদর দপ্তর (Police Headquarters) বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অপেক্ষায় দেশ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) বলেন, “ইনশাআল্লাহ, ম্যাডাম ৫ তারিখ দেশে ফিরছেন।” তিনি জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিলম্বিত হলে বেগম জিয়া সাধারণ বিমানে দেশে ফিরবেন।

রাজনীতির মাঠে তার প্রত্যাবর্তনের খবরে ঢাকামুখী জনস্রোত তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিচ্ছেন বেগম জিয়াকে এক নজর দেখার আশায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে বেগম জিয়ার প্রত্যাবর্তন মানেই একটি নতুন পথচলা, নতুন ভারসাম্য ও সম্ভাবনার সূচনা।