বিএনপি সমঝোতার পক্ষে, ক্ষমা ও অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত পরে: সালাহউদ্দিন আহমেদ

সংবিধান সংস্কার, জাতীয় ঐকমত্য ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা নিয়ে মুখ খুললেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed)। বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য জানান, দলটি রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনতে রিকনসিলিয়েশন বা সমঝোতার পথে এগোতে চায়। তবে, কারা ক্ষমার আওতায় পড়বে, তা এখনই নির্ধারিত নয়।

রিকনসিলিয়েশন নিয়ে বিএনপির অবস্থান

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর বিচার চাইলেও তা নির্বাহী আদেশে নয় বরং আইনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার আদলে একটি ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠনের কথা ভাবছে বিএনপি। তবে এই কমিশনের কাঠামো, বিধিমালা ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো ভবিষ্যতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।

সংবিধান সংস্কার নিয়ে মতভেদ

সংসদের বাইরে সংবিধান পরিবর্তনকে আইনানুগ মনে করে না বিএনপি। সালাহউদ্দিন বলেন, ভবিষ্যৎ সংসদেই এসব প্রস্তাব পাশ করতে হবে। কমিশনের কিছু সুপারিশে বিএনপি দ্বিমত পোষণ করেছে, বিশেষ করে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির বিরোধিতা করছে তারা। এ পদ্ধতি রাষ্ট্র পরিচালনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও সাংবিধানিক ভারসাম্য

বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর মাধ্যমে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হোক– তা চায় না। বরং তারা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারসাম্য আনতে চায়। সালাহউদ্দিন বলেন, একবার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হলে তখন ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্ন আসবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগ

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে থাকলেও বিচার বিভাগকে এ প্রক্রিয়ায় না টানার পরামর্শ দিয়েছে। তারা চায়, একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন হোক, যাতে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ থাকে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের আজ্ঞাবহ না হয়।

নির্বাচন কমিশন ও নিরপেক্ষতা

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে বিরোধীদলের কিছু অভিযোগ থাকলেও সালাহউদ্দিন জানান, নাসির উদ্দিন (Nasir Uddin)-এর নাম শুধু বিএনপি নয়, আরও অনেক দল প্রস্তাব করেছিল। কমিশনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ঘাটতি দেখছেন না তিনি।

আইন, বিচারের দাবিতে বিএনপির অবস্থান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সালাহউদ্দিন বলেন, দণ্ডিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে অপরাধী গণ্য করা উচিত নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও বিচার দাবি করছে বিএনপি, তবে তা আইনের মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

৫ আগস্ট প্রসঙ্গে মত

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে কিনা, তা জনগণই ঠিক করবে। সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের বিচার হতে পারে, কিন্তু নির্বাহী আদেশে দল নিষিদ্ধ করা অনুচিত।