রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত চান প্রিন্স হ্যারি, নিরাপত্তা মামলায় হেরে হতাশা

যুক্তরাজ্য (United Kingdom)-এ নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে পরাজয়ের পর ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি (Prince Harry) তার হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং রাজপরিবার (Royal Family)-এর সঙ্গে পুনর্মিলনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

হ্যারির হতাশা: “জীবন অনেক মূল্যবান, আর কোনো বিরোধ চাই না”

বিবিসি (BBC)-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, “আমি চাই পারিবারিক পুনর্মিলন হোক। আর কোনো ঝগড়া নয়, জীবন অনেক মূল্যবান।” তিনি জানান, তার বাবা রাজা চার্লস তৃতীয় (King Charles III) বর্তমানে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন না।

হ্যারি বলেন, “আমি জানি না, তিনি আর কতদিন আমাদের মাঝে থাকবেন। আমি চাই না এমন অবস্থায় আমরা বিরোধে থাকি।”

নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থতা ও রাভেকের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ

২০২০ সালে রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর থেকে হ্যারি, তার স্ত্রী মেগান মার্কল (Meghan Markle), এবং সন্তান প্রিন্স আর্চি হ্যারিসন (Prince Archie Harrison) ও প্রিন্সেস লিলিবেট ডায়ানা (Princess Lilibet Diana)-র জন্য পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা চেয়ে আইনি লড়াই করে আসছিলেন।

তবে রাভেক (RAVEC)—প্রোটেকশন অব রয়্যালটি অ্যান্ড পাবলিক ফিগার্স এক্সিকিউটিভ কমিটি—২০২০ সালে তার স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। সম্প্রতি আদালত রাভেকের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেয়।

হ্যারি বলেন, “আমার সবচেয়ে খারাপ শঙ্কাগুলো সত্যি হলো। যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তারা মনে করে এটা ঠিক—এটাই সবচেয়ে কষ্টের।”

তিনি দাবি করেন, রাভেকের সিদ্ধান্তে রাজপরিবারের ‘প্রভাব’ ছিল এবং সেখানকার একজন প্রতিনিধি ওই কমিটিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

“আমার নিরাপত্তা রাতারাতি ঝুঁকিপূর্ণ থেকে সাধারণ পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়”

হ্যারি অভিযোগ করেন, তাকে সরাসরি অবহিত না করেই তার নিরাপত্তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়। “আমি রাজাকে বলিনি হস্তক্ষেপ করতে, শুধু বলেছিলাম নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কাজ করতে দিন,” বলেন তিনি।

বর্তমানে হ্যারি যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারেন কেবল রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলে, কারণ তখনই তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “এখন আমি আমার সন্তানদের তাদের মাতৃভূমি দেখাতে পারব না—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”

আদালতের পথ বন্ধ, এবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চান

হ্যারি বলেন, “এই পথে আর কোনো আইনি সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।” তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার (Keir Starmer) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার (Yvette Cooper)-কে অনুরোধ জানান, রাভেকের গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া যেন পর্যালোচনা করা হয়। তিনি জানান, শিগগিরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখবেন।

পারিবারিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রেই মূল সংকট

হ্যারি সাক্ষাৎকারের শেষে বলেন, “সবকিছুর কেন্দ্রেই রয়েছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব। আজ পাঁচ বছর পরও সেই দ্বন্দ্ব আমাদের এক ছাদের নিচে আটকে রেখেছে।”

এদিকে বাকিংহাম প্যালেস (Buckingham Palace) থেকে জানানো হয়েছে, “এই বিষয়গুলো ইতোমধ্যেই বহুবার আদালতে খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং প্রতিবার একই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া হয়েছে।”