সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি নেতার বক্তব্য
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National-Citizens-Party)’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat-Abdullah) বলেছেন, “ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পলাতক হাসিনার আওয়ামী লীগ মারা গেছে বাংলাদেশে আর জানাজা হয়েছে দিল্লিতে।”
শনিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (Suhrawardy-Udyan) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam-Bangladesh) আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা
হাসনাত বলেন, “আওয়ামী লীগ (Awami-League) কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।” এই সংগঠন নিষিদ্ধ করার মাধ্যমেই দেশের সংস্কার শুরু হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত, প্রয়োজন হলে আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।” তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার ৮ মাস পরও আজ যে দাবিতে জমায়েত, তা গর্বের নয়, বরং লজ্জার।
পুনর্বাসনের বিরোধিতা ও ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত
হাসনাত দাবি করেন, “৫ই আগস্ট জনগণ ‘রেড কার্ড’ দেখিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই ভূখণ্ডে আর পুনর্বাসন হবে না।” তিনি বলেন, যারা আগে বায়তুল মোকাররম (Baitul-Mukarram) মসজিদের সামনে থেকে মানুষকে টেনে বের করেছে, সেই আওয়ামী লীগের জন্য আর কোনো স্থান নেই।
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য
ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad-Yunus)-এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে হাসনাত বলেন, “আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।” তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ড. ইউনূস, আমরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি, এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি—আওয়ামী লীগ আর আসবে না। আওয়ামী লীগ মারা গেছে বাংলাদেশে, জানাজা হয়েছে দিল্লিতে।”
শেখ মুজিব ও ৭৪’র দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গ
হাসনাত আরও বলেন, “১৯৭১-এর পর শেখ মুজিব বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। ত্রিশ হাজার জাসদ (JASAD) কর্মী হত্যা করে সারা দেশে ‘কসাইতন্ত্র’ চালু করেছে। লুটপাটের জন্য ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে ১৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল।”
নারী সংস্কার নিয়ে বক্তব্য
নারী সংস্কার প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা বলেন, “হেফাজতে ইসলাম যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা দ্রুত সমাধান করতে হবে।” তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় সংস্কার বাদ দিয়ে এমন সংস্কার দরকার যা নারীদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করে এবং দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষা করে।
সমাবেশের সারসংক্ষেপ
সমাবেশ শুরু হয় সকাল ৯টায় এবং চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (Shah-Muhibullah-Babunagari)। এতে দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামি চিন্তাবিদরা বক্তব্য রাখেন।
হেফাজতের চার দফা দাবি
- নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিল
- সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল
- হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডসহ সব গণহত্যার বিচার
- ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে সরকারের কার্যকর ভূমিকা