হোয়াইট হাউসে বৈঠক ও তুলা আমদানির শর্ত
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক এড়াতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হোয়াইট হাউস (White House)-এ এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান (Dr. Khalilur Rahman)। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের এক কর্মকর্তা তাকে জানিয়ে দেন, যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তুলা আমদানি করে, তবে শুল্ক বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নেত্র নিউজ-এর বরাতে জানা যায়, এই তথ্য প্রথম প্রকাশ করেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট (The Washington Post) এর কলামিস্ট ম্যাট বাই। তার লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম তুলা আমদানিকারক দেশ, এবং সাধারণত পশ্চিম আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে তুলা সংগ্রহ করে। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে হলে দেশটিকে আমেরিকান তুলা আমদানি বাড়াতে হবে। এই প্রস্তাবে খলিলুর রহমান দ্রুত সম্মত হন।
ইলন মাস্কের সঙ্গে আকস্মিক সাক্ষাৎ ও স্টারলিংক প্রসঙ্গ
উক্ত বৈঠকের পর খলিলুর রহমান কে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি হঠাৎই দেখতে পান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক (Elon Musk)।
কলামে উল্লেখ করা হয়, মাস্ক তখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে কথা বলতে চান, যা স্টারলিংক (Starlink) সেবা নিয়ে। জানা গেছে, স্থানীয় টেলিকম কোম্পানিগুলোর চাপ ছিল যাতে স্টারলিংক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বৈঠকে পরোক্ষ বার্তা ছিল যে, বাংলাদেশ যদি স্টারলিংককে বাজারে প্রবেশের অনুমতি না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য শর্ত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
মাস্কের আমন্ত্রণ ও কূটনৈতিক বার্তা
পরে একটি ৯০ মিনিটের ভিডিও কলে মাস্ক এবং স্টারলিংকের নির্বাহী রিচার্ড গ্রিফিথসের সঙ্গে যুক্ত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস (Dr. Yunus) ও খলিলুর রহমান। সেখানে ইউনূস মাস্ক কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং স্টারলিংক সিস্টেমের উদ্বোধন নিজ চোখে দেখতে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা অবশ্য কূটনৈতিক চাপে মাথা নত করার বিষয়টি নাকচ করে বলেছেন, তারা স্টারলিংককে ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন। নতুন সরকার অতীতে আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের ইন্টারনেট ব্লক নীতির অবসান চায়।
স্টারলিংককে দশ বছরের লাইসেন্স
২০২৫ সালের এপ্রিলের শেষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission) স্টারলিংক কে বাংলাদেশের বাজারে কাজ করার জন্য দশ বছরের লাইসেন্স প্রদান করেছে। এতে করে বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক নীতিতে নতুন এক দিক উন্মোচিত হয়েছে।