সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের নতুন কর্মসূচি ও ১২ দফা দাবি ঘোষণা

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam Bangladesh) নারীদের অধিকার আদায় ও ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ও ১২ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan)-এ আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমান (Sajidur Rahman)।

কর্মসূচি ও দাবিসমূহ

মহাসচিব সাজিদুর রহমান জানান, নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে আগামী ২৩ মে, শুক্রবার বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

  • বর্তমান নারী কমিশন বাতিল করে আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠন
  • সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বহুত্ববাদ পরিত্যাগ
  • শাপলা চত্বরের ঘটনার বিচার
  • আওয়ামী লীগ (Awami League) কে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে বিচার এবং বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল
  • আলেমদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার
  • প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা
  • রাখাইনে করিডোর না দেওয়ার আহ্বান
  • কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা

মহাসমাবেশের বক্তব্য ও রাজনৈতিক বার্তা

সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই মহাসমাবেশে হেফাজতের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী থেকে এসে অংশ নেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবু নগরী (Shah Muhibbullah Babu Nagari)।

তার বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী (Azizul Haque Islamabadi)। তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করি। আজও ষড়যন্ত্র থেমে নেই।”

তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলামবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে ছাড় দেওয়া হবে না। এনজিও প্ররোচিত সংস্কার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় অবমাননার শাস্তির সুপারিশ বাতিল করে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন কার্যকর করার আহ্বান জানান।

ঘোষণাপত্র পাঠ ও সমাবেশের সমাপ্তি

সমাবেশে ১২ দফা দাবিসংবলিত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতের নায়েবে আমির ও বেফাকুল মাদারেসিন (Befakul Madarisin) মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক (Maulana Mahfuzul Haque)।

তিনি বলেন, “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন বাতিল করে আলেমদের নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বহুত্ববাদ শব্দ বাদ দিতে হবে। শাপলা চত্বর ও জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যার বিচার তরান্বিত করতে হবে। আওয়ামী খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।”

দুপুর ১টা ১১ মিনিটে হেফাজতের আমিরের মুনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।