‘প্রথম আলো’র বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ফের তীব্র ক্ষোভ, ক্ষমা না চাওয়ায় সমালোচনার মুখে

ধর্ম অবমাননার পুরনো বিতর্ক ফের উত্তপ্ত

২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, প্রথম আলো (Prothom Alo) তাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘আলপিন’-এ হযরত মুহাম্মদ (সা.) (Hazrat Muhammad SAW) কে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে দেশব্যাপী তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ওই সময় ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ এনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ‘আলপিন’-এর এই কার্টুন প্রকাশের ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়ে প্রথম আলো।

এক-এগারোর পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্ষমা প্রার্থনা

ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন ‘এক এগারোর’ অনির্বাচিত সরকার প্রথম আলো (Prothom Alo)-কে রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে। তারা আলেম সমাজের সঙ্গে দেন-দরবার করে এবং মতিউর রহমান (Matiur Rahman), প্রথম আলোর সম্পাদক, বায়তুল মোকাররম (Baitul Mukarram) মসজিদের খতিবের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে। সেখানে মতিউর রহমান করজোড়ে ক্ষমা চান।

এছাড়া তিনি কার্টুনিস্ট আরিফকে চাকরিচ্যুত করে এবং তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। ওই কার্টুনিস্টকে দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ঈদ সংখ্যার বিতর্ক

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যার প্রচ্ছদে কুকুরের ছবি ব্যবহারকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে দেখছেন। দেশজুড়ে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রথম আলোর (Prothom Alo) এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) এর আমির ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman) প্রথম আলোর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

উপদেষ্টামণ্ডলী ও রাজনৈতিক এজেন্ডা

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রথম আলোর বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্যই পত্রিকাটির নিয়মিত লেখক এবং তাদের একমাত্র পরিচয় ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। এদের কারণেই পত্রিকাটি নাকি ধর্মবিরোধী প্রচার চালাতে সাহস পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই উপদেষ্টা পরিষদ সরকারের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে এবং নির্বাচন থেকে সরকারকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

ভারতীয় প্রভাব ও বিরাজনীতিকরণের অভিযোগ

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রথম আলো (Prothom Alo) এবং দ্য ডেইলি স্টার (The Daily Star) কে ভারতীয় স্বার্থে কাজ করা গণমাধ্যম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই দুটি পত্রিকা নাকি নাস্তিকতা প্রচার ও রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টির কাজে লিপ্ত।

নারী সংস্কার কমিশন ও ইসলাম বিরোধী সুপারিশ

সম্প্রতি গঠিত নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকেও ইসলাম বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এসব প্রস্তাবনার পেছনে প্রথম আলোর ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম (Hefazat-e-Islam) শনিবার এক স্মরণকালের বৃহত্তম সভার আয়োজন করে এবং নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিলের দাবি জানায়।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া

দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কেবল প্রথম আলো (Prothom Alo)-র উপরই নয়, সরকারের দিকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তারা দ্রুত প্রথম আলোসহ ইসলামবিরোধী অপপ্রচার চালানো গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।