চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ইউনিটেক্স গ্রুপ (Unitex Group)-এর বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক (Islami Bank) থেকে ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হানিফ চৌধুরী (Hanif Chowdhury) ও জামাতা বেলাল আহমেদ (Belal Ahmed) ব্যাংকটির নীতিমালা উপেক্ষা করে এই ঋণ নিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
পরিবার ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রভাব
২০১০ সালে বেলালের সঙ্গে এস আলম গ্রুপ (S Alam Group)-এর চেয়ারম্যান সাইফুল আলম (Saiful Alam)-এর মেয়ের বিয়ের পর থেকেই ইউনিটেক্সের ব্যাংকঋণ প্রাপ্তিতে ব্যাপক অগ্রগতি দেখা যায়। বিশেষ করে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাংকটির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে ইউনিটেক্স গ্রুপ।
নীতিমালা লঙ্ঘন ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান
ইসলামী ব্যাংকের পাহাড়তলী (Pahartali) শাখা থেকে ইউনিটেক্স স্টিল নামে ৮১৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়, যদিও এটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত। জমি কেনার আগেই ঋণ ছাড় হয় এবং কারখানা এখনো নির্মিত হয়নি।
অন্যদিকে ওআর নিজাম রোড (OR Nizam Road) শাখা থেকে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৯২৩ কোটি টাকা ঋণ নেয় ইউনিটেক্স: ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস, ইউনিটেক্স কম্পোজিট স্পিনিং, ও ইউনিটেক্স গ্র্যান্ড স্পিনিং। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কারখানা স্থাপন করতে পারেনি।
আত্মীয়দের মাধ্যমে মালিকানা স্থানান্তর
নতুন প্রতিষ্ঠানে হানিফ বা বেলালের নাম নেই; মালিকানা দেখানো হয়েছে আত্মীয়স্বজনের নামে, যেমন: মাইমুনা খানম (Maimuna Khanom), চাচা আব্দুল আজিজ, ফুফা শহীদুল্লাহ কাইছার, কাজিন সৈয়দ মশিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদ ও মো. মোহাইমেনুল ইসলাম চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন
বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank)-এর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে, কোলাটারেলও ছিল অপ্রতুল। বিশেষ করে ইউনিটেক্স গ্র্যান্ড স্পিনিংকে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ১১৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।
ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য
ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান সরকার (Moniruzzaman Sarkar) বলেন, “আমরা ঋণের টাকা উদ্ধারে সম্পত্তি নিলামে তুলেছি, পাশাপাশি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ইউনিটেক্স গ্রুপের জিএম (ফাইন্যান্স) মোহাম্মদ মোস্তাক (Mohammad Mostak) বলেন, “আমরা ৪৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। আমাদের প্রকল্প এখনো চলমান, অথচ ব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।”
এক সাবেক কর্মকর্তা জানান, “ইউনিগ্যাস নামে দুটি প্ল্যান্ট থাকলেও সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি টাকা লাগার কথা, কিন্তু ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে।”
পটভূমি: ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন আহসানুল আলম (Ahsanul Alam)। সেই সময় থেকে ব্যাংকটি থেকে এস আলম ও তাঁর স্বজনদের নামে ও বেনামে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে এস আলম পরিবার ও ইউনিটেক্স সংশ্লিষ্টরা গা ঢাকা দিয়েছেন।