সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ পাঁচজনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে দুর্নীতির সাম্রাজ্য

সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী (LGRD Minister) তাজুল ইসলাম (Tazul Islam) ডান হাতের পাঁচ আঙুলের মতো ঘনিষ্ঠ পাঁচজন সহযোগীকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছিলেন একটি দুর্নীতির সাম্রাজ্য, যা বিস্তৃত ছিল কুমিল্লার (Comilla) মনোহরগঞ্জ (Manoharganj) ও লাকসাম (Laksam) উপজেলাসহ সারা দেশে। তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা অবৈধ অর্থ, কমিশন, বদলি, নিয়োগ ও জমি দখলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন।

দুর্নীতির পাঁচ সহযোগী

তাজুলের ঘনিষ্ঠ পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন ভাতিজা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন, ব্যক্তিগত সহকারী মো. কামাল হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব জাহিদ হোসেন এবং শ্যালক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের (Awami League) সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী। এরা সবাই তাজুলের নির্দেশে মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার, বিরোধীদের দমন, জমি দখল ও টেন্ডার বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন।

‘আয়নাঘর’ ও নির্যাতন কেন্দ্র

শ্যালক মহব্বত আলী পরিচালিত ‘আয়নাঘর’ ছিল একটি নির্যাতনকেন্দ্র, যেখানে বিরোধীদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। বিএনপি (BNP) ও জামায়াত (Jamaat) নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হতো এখানে।

নিয়োগ, বদলি ও কমিশন বাণিজ্য

এলজিইডি (LGED), ওয়াসা (WASA) এবং সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রকল্পে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে কমিশন নেওয়া হতো। প্রকৌশলীর বদলিতে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো, প্রকল্প পরিচালকের ক্ষেত্রে তা কোটি টাকা ছাড়াত। কামাল হোসেন এসব টাকা আদায়ে যুক্ত ছিলেন এবং এখন পলাতক।

শাহাদাত হোসেনের ভূমিকা

শাহাদাত ছিলেন পুরো দুর্নীতিচক্রের হিসাবরক্ষক ও সমন্বয়ক। তিনি ঢাকার তেজগাঁওয়ে ফেবিয়ান গ্রুপ (Fabian Group) ভবনে বসে বিভিন্ন অর্থবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।

অবৈধ সম্পদ ও জমি দখল

তাজুল ও তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম (Fauzia Islam) নামেও বিপুল সম্পদ অর্জিত হয়েছে, যার বেশিরভাগই অপ্রকাশিত। বান্দরবানের লামা (Lama) উপজেলায় প্রায় ৩০৪.৫৯ একর জমি, ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের (Chattogram) হালিশহরে বাড়ির এক-তৃতীয়াংশসহ একাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আদালত অবরুদ্ধ করেছে।

মামলা ও আইনি পদক্ষেপ

দুদক (ACC) তাজুল, ফৌজিয়া ইসলাম ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন ও পেনাল কোড অনুযায়ী। কুমিল্লার লাকসাম পৌর বিএনপি (Laksam Municipal BNP)’র যুগ্ম আহবায়ক মনির আহমেদ তাজুলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা, হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।

এখন পলাতক

তাজুল বর্তমানে ভারতে (India) অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাঁর ভাতিজা শাহাদাতসহ সহযোগীরা পলাতক, কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।