আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচিত ওয়াসিম আকরাম (Wasim Akram) তার আত্মজীবনী ‘সুলতান: এ মেমোয়র’-এ নিজের জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায় তুলে ধরেছেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত বইটির ‘ব্যাটলিং মাই ডেমোনস’ অধ্যায়ে তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন কোকেন আসক্তি, পারিবারিক অবহেলা এবং স্ত্রী হুমা মুফতি (Huma Mufti)র মৃত্যু নিয়ে তার গভীর অনুশোচনা।
খ্যাতির মোহ এবং নেশার শুরু
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর পার্টি ও বিলাসবহুল জীবনের দিকে আকৃষ্ট হন আকরাম। একসময় ইংল্যান্ড এর এক পার্টিতে প্রথম কোকেন সেবনের মাধ্যমে শুরু হয় তার নেশার যাত্রা। ধীরে ধীরে তা গড়ায় নিয়মিত আসক্তিতে। পারিবারিক দায়িত্বে অবহেলা ও মিথ্যা বলার প্রবণতা বাড়তে থাকে তার মধ্যে।
পারিবারিক টানাপোড়েন
আকরাম স্বীকার করেন, তিনি একজন ভালো স্বামী বা পিতা ছিলেন না। সন্তানদের দেখভালে সব দায়িত্ব স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দেন। স্ত্রী হুমা কোকেন আসক্তি ধরে ফেললে তিনি বাধ্য হন লাহোর (Lahore) এর এক নিম্নমানের রিহ্যাবে ভর্তি হতে। সেখানে চিকিৎসার চেয়ে অর্থ আদায়ই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
হুমার অসুস্থতা এবং মৃত্যু
২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলাকালে আকরাম যখন গুরুগাঁও (Gurgaon) তে কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) দলের ক্যাম্পে, সেই সময় লাহোরে হুমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে ভর্তি হন ন্যাশনাল ডিফেন্স হাসপাতাল (National Defence Hospital), পরে স্থানান্তরিত করা হয় ডক্টরস হাসপাতালে (Doctors Hospital)। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় হুমাকে সিঙ্গাপুর (Singapore) নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু চেন্নাই (Chennai) যাওয়ার পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই হুমার হৃদযন্ত্র থেমে যায়।
চিকিৎসা ও সহানুভূতির গল্প
অ্যাপোলো হাসপাতাল (Apollo Hospital) এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহানুভূতিমূলক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন আকরাম। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মাত্র ৪২ বছর বয়সে ২৫ অক্টোবর, ২০০৯ সালে হুমার মৃত্যু ঘটে।
পরবর্তী জীবন ও আত্মসমালোচনা
২০১৩ সালে আকরাম বিয়ে করেন অস্ট্রেলিয়ান শানিয়ারা থম্পসনকে। বর্তমানে তারা করাচি (Karachi) ও সিডনিতে বসবাস করেন। দুই ছেলে একজন অস্ট্রেলিয়া এবং আরেকজন যুক্তরাষ্ট্র-এ থাকেন। আকরাম নিয়মিত ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তার আত্মজীবনীর স্পষ্টতা ও সাহসিকতা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।