গত ৮ মাসে দলীয় কোন্দলে বিএনপির (BNP) অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় নেতৃত্ব সংকট, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, এবং স্থানীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতার ফলে এ সহিংসতা বেড়েছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে তৃণমূলে বিএনপির অন্তর্কোন্দল দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন নেতাকর্মী। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (Ain o Salish Kendra) জানিয়েছে, আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৭৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৫৮ জনই ছিলেন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার।
তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা ও স্থানীয় আধিপত্যের দ্বন্দ্ব
৫ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জে (Badarganj) দলীয় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন বিএনপি কর্মী লাভলু মিয়া। স্থানীয় ব্যবসায়ীকে মারধরের প্রতিবাদে ডাকা মানববন্ধন ঘিরে এ সংঘর্ষ ঘটে। নিহতের ছেলে মো. রায়হান কবির জানান, অভিযুক্তদের কেউ কেউ আগাম জামিন পেয়েছেন টাকার প্রভাবে। রায়হানের ভাষায়, “এই যদি হয় রাজনীতি, তাহলে দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ কেউ যেন রাজনীতি না করে।”
১১ এপ্রিল গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় (Dhirashram, Gazipur) কুপিয়ে হত্যা করা হয় কৃষকদল নেতা রাকিব মোল্লাকে। ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তার মা রুবিনা আক্তার সীমা বলেন, “বিএনপির কিছু লোক চায় না মামলাটা হোক।”
বিএনপির অবস্থান ও ব্যবস্থাগ্রহণ
রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi), বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব স্বীকার করেছেন যে সহিংসতা হচ্ছে, তবে তা প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার, পদ স্থগিত, শোকজ এবং কমিটি বিলুপ্তির মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আওতায় আনা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
রিজভী আরও বলেন, “বিএনপি ১৫-১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার। সেই প্রেক্ষাপটে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।”
নির্বাচন ও নেতৃত্ব সংকটে বিশ্লেষকদের শঙ্কা
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ (Mohiuddin Ahmed) মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ বিএনপির দলীয় সংহতিতে ফাটল ধরিয়েছে। “বেগম জিয়া সক্রিয় থাকাকালে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। এখন প্রতিটি নেতার নিজস্ব বলয় আছে, ফলে নির্বাচন এলেই তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”
অন্য বিশ্লেষক কাজী মারুফুল ইসলাম (Kazi Maruful Islam) মনে করেন, রাজনৈতিক সহিংসতার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক দখলের লড়াই। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগমুহূর্তে দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও সম্ভাব্য লাভের জন্যই এই সহিংসতা বাড়ছে।”
তার মতে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবরদখলের প্রবণতা সমাজে এক ধরনের অদ্ভুত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।