হেফাজতে ইসলাম (Hefazat-e-Islam) আয়োজিত মহাসমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizens’ Party) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah) এর অংশগ্রহণ এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে তার বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan)-এ আয়োজিত এই সমাবেশে তিনি সরকারের প্রতি হেফাজতের ‘উদ্বেগ’গুলো দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান।
সমাবেশে চার দফা দাবি
হেফাজতে ইসলাম এই সমাবেশে চারটি দাবি তোলে:
1. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিল,
2. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা’ পুনর্বহাল,
3. হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ‘গণহত্যার বিচার’,
4. ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ।
এনসিপি নেতার বক্তব্য ও বিতর্ক
সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ (Awami League) কে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তোলেন এবং শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) ফাঁসির দাবিও করেন। তিনি বলেন, “নারী সংস্কার নিয়ে যে কনসার্ন এসেছে, তা ড. ইউনূস যেন দ্রুত অ্যাড্রেস করেন।” তিনি সংস্কারের ক্ষেত্রে ‘ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ’ রক্ষা করার আহ্বান জানান।
এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এনসিপি ইসলামপন্থী দলের সাথে ঐক্যের পথে এগোচ্ছে কি না, এবং এ বক্তব্য নারীবিদ্বেষী অবস্থানের ইঙ্গিত দেয় কিনা।
এনসিপির ব্যাখ্যা ও দ্বৈত বক্তব্য
হাসনাতের উপস্থিতি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কিছু বিভ্রান্তি দেখা গেলেও এনসিপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব (Ariful Islam Adib) জানান, দল হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তবে দলের অবস্থান থেকে তার বক্তব্য নেতিবাচক মনে হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এনসিপি মনে করে, সংস্কারে কিছু বিষয় আছে যেগুলো সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন (Dr. Zobaida Nasreen) মনে করেন, এনসিপির অবস্থানকে শুধু ব্যক্তিগত মত বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বরং এটি দলটির মতাদর্শিক অবস্থান স্পষ্ট করে। তিনি বলেন, এনসিপি একটি “কিংস পার্টি” হিসেবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলছে।
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব
প্রস্তাবিত নারী সংস্কার কমিশনে ছিল: নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার, বহুবিবাহ বন্ধ, যৌনকর্মীদের শ্রমিক স্বীকৃতি ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার। হেফাজত এগুলোকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানিয়েছে। হাসনাত এই প্রস্তাবগুলোর পূর্ণ বাতিল চাননি বললেও আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার প্রক্রিয়া নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে হেফাজতের সমাবেশে এনসিপি নেতার অংশগ্রহণ রাজনৈতিক জোট ও মতাদর্শিক অবস্থানের নতুন সিগন্যাল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।